ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সমালোচনা
ডেস্ক রিপোর্টে, সোনারগাঁ টাইমস ২৪ ডটকম :
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘২০২০ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক ওই বার্ষিক প্রতিবেদনে মানবাধিকারের বিভিন্ন দিক নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ উঠে আসে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গতকাল এই রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে বলেন, কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নতুন এমন সব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে যা আগে কখনও দেখা যায়নি। ২০২০ সালের পর্যবেক্ষণে সেইসব দিকও উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘মহামারি কেবল কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত দিকেই প্রভাব ফেলেনি, সেইসঙ্গে মানবাধিকার ও নিরাপদে তার মৌলিক স্বাধীনতাতেও প্রভাব ফেলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা কর্তৃপক্ষ উইঘুর মুসলিমদের ওপর ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে এবং একইসঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় এমন সব অপরাধ, যেমন- বন্দিত্ব, নির্যাতন এমনকি জোরপূর্বক বন্ধ্যাত্বের শিকার হতে হয়েছে তাদের। এছাড়াও প্রতিবেদনে নিকারাগুয়ায় ওরটেগা সরকার দমনমূলক বিভিন্ন আইন পাশ করেছে বলে জানানো হয়। যার মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও স্বাধীন গণমাধ্যমকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণে উঠে আসে।
এতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যায়, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে, কিংবা জনশৃঙ্খলা, শালীনতা, নৈতিকতার বিরুদ্ধে যায় অথবা আদালত অবমাননাকারী বা অপরাধে প্ররোচণাদানকারী বলে মনে করে, তাহলে সেই মত প্রকাশকে বাংলাদেশ সরকার বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, মহামারি মোকাবিলা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকাণ্ড বিষয়ে প্রশ্ন করায় ব্যাপকভাবে অনেকের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, গত বছরের মে’র প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে অন্তত ১৯ সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং নাগরিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় বলে জানানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে মানহানি, গুজব ছড়ানো ও সরকারবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পর দেশটির প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা ও ক্ষমতাসীন সরকারের সহযোগী ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়, হয়রানি করে ও ভয় দেখায়। পর্যবেক্ষণে আরও উঠে আসে, যেসব গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করেছে কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য তুলে ধরেছে তাদেরকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
হয়রানি আর নিগ্রহের শিকার হওয়া থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিক সরকারের সমালোচনার বিষয়ে নিজেরাই নিজেদের ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং কয়েক মাস ধরে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য ফটোসাংবাদিক কাজল এবং আরও ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। যেখানে অভিযোগ আনা হয় মাদক ও আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদনের কারণে তার মানহানি হয়েছে। এ ঘটনায় কাজলকে ২৩৭ দিন কারাভোগ করতে হয়। গত ২৫ ডিসেম্বর জামিনে ছাড়া পান কাজল।
সূত্র-দ্যা ডেইলি স্টার