ইতিহাস ও সংস্কৃতি

ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালবাসা দিবস কি ?

ডেস্ক রিপোর্টে, সোনারগাঁ টাইমস ২৪ ডটকম :

ইংরেজিতে লাভ মানে বাংলায় ভালবাসা। তাহলে ভ্যালেন্টাইন ডে কিভাবে ভালবাসা দিবস হয়। ভ্যালেন্টাইন ডে বা বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নেপথ্যে একটি ইতিহাস রয়েছে।

এ ইতিহাস এক দিকে যেমন বর্বর অপর দিকে মর্মস্পর্শী। প্রাচীন রােমান সম্রাজ্যে এ দিবসটির প্রবর্তন ঘটলেও বাংলাদেশে দিবসটি প্রবর্তন করেন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত সাংবাদিক শফিক রেহমান।

১৯৯৩ সালে যায়যায়দিন পত্রিকায় আলােচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম বিষয়টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর প্রায় দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে সেই লিওপারসালিয়া বা ফেব্রুয়ালিয়া অথবা ‘ ভ্যালেন্টাইন ডে ‘ বাংলাদেশি সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালােবাসা দিবসের উৎপত্তিঃ খ্রিস্টের জন্মের আগে রােমানদের ছিল জয়জয়কার অবস্থা।

রােমানরা খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার আগে প্যাগান ( পৌত্তলিক ) ধর্মের অনুসারী ছিলেন। প্যাগান ধর্মের লােকজন খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত লিওপারসালিয়া বা ফেব্রুয়ালিয়া পূজা পালন করতাে। এই ফেব্রুয়ালিয়া অনুষ্ঠানের নামানুসারে পরবর্তীতে মাসটির নামকরণ করা হয় ফেব্রুয়ারি।

মাসটির ১৩ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই পূজা হতাে। পূজার উদ্দেশ্য ছিল দেবতার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে পুণ্যতা , উর্বরতা ও সমৃদ্ধি লাভ করা। অনুষ্ঠানের মাঝের দিনটি ছিল খুবই আকর্ষণীয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি দেবীরাণী জুনাের সম্মানে পবিত্রতার জন্য কুকুর আর উর্বরতার জন্য ছাগল উৎসর্গ করা হতাে।

উৎসর্গীকৃত কুকুর ও ছাগলের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যুবকেরা চামড়ার তৈরি সামান্য পােশাক পরতাে। তারপর চামড়ার বেত দিয়ে দেবীর নামে তরুণীদের পশ্চাতে আঘাত করতাে। বিশ্বাস করা হতাে দেবী এ জন্য ওই তরুণীদের উর্বরতা বাড়িয়ে দেবেন।

দিনটির আরও একটি বিশেষত্ব হল , এ দিনেই পরবর্তী এক বছর আনন্দ দেয়ার জন্য দেবীর ইচ্ছায় লটারির মাধ্যমে তরুণরা তাদের তরুণী সঙ্গিনীকে পেতেন।

প্রথানুযায়ী বড় একটি বক্সে তরুণীদের নাম লিখে রাখা হতাে। সেখান থেকে তরুণরা একেকটি নাম তুলে পরবর্তী বছর লটারী পর্যন্ত নির্বাচিত যুগল একসঙ্গে থাকার সুযােগ পেতেন।

এরই মাঝে ২৬৯ সালে ঘটে যায় আরেকটি ঘটনা। সে সময় রােমান সম্রাট ছিলেন ক্লাডিউয়াস। খ্রিস্টান ধর্মযাজক, সমাজসেবক ও চিকিৎসক স্টিভ ভেলেন্টাইন নামের এক যুবক ধর্ম প্রচারকালে রােমান সম্রাট ক্লাডিউয়াস এর নানা আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেফতার হন।

রােমান সম্রাটের যেসব আদেশ তিনি লঙ্ঘন করেছেন তার মধ্যে প্রধানত, রাজার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য যুবকদের বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল। কারণ অবিবাহিত সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে বেশি ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিতে পারতেন।

তাই রােমান সম্রাট ক্লাডিউয়াস এর যুবক সেনাদের বিয়ে করা নিষেধ করে দেন। কিন্তু স্টিভ ভেলেন্টাইন এসব সেনাদের বিয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন ও গােপনে বিয়ে দিয়ে দিতেন।

তাছাড়া জনগণকে ধর্মদ্রোহী করা, সম্রাটের বিপক্ষের যুদ্ধাহত খ্রিস্টান সৈন্যদের চিকিৎসা করা এবং রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডের জন্য সম্রাটের রােষানলে পড়ে গ্রেফতার হন।

স্টিভ ভেলেন্টাইন নামের এই যুবক। কারাগারে যাওয়ার পর জনগণের সহানুভূতিতে তিনি আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

এই জনপ্রিয় মানুষটিকে দেখার জন্য প্রতিদিন অগণিত মানুষ কারাগারে যেতেন। তারমধ্যে কারারক্ষীর অন্ধ মেয়ে জুলিয়া ছিলেন অন্যতম। স্টিভ ভেলেন্টাইনের সঙ্গে তিনি প্রায়ই দেখা করতেন এবং দীর্ঘ সময় তার সঙ্গে থাকতেন।

একপর্যায়ে স্টিভ ভেলেন্টাইন আধ্যাত্মিক চিকিৎসার মাধ্যমে অন্ধ জুলিয়াকে সুস্থ করে তােলেন।

জুলিয়াকে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করেন এবং দুজনই গভির ভালােবাসায় আবদ্ধ হন। এ সংবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে সম্রাট ২৭০ সালের কোনাে এক সময়ে জনসম্মুখে স্টিভ ভেলেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। স্টিভ ভেলেন্টাইন ফাঁসিকাষ্ঠে যাওয়ার আগে তার ভালােবাসার মানুষ জুলিয়াকে একটি চিঠি লেখেন যার শেষে লেখা ছিল তােমার ভেলেন্টাইনের পক্ষ থেকে।

এর পরই ৪৯৬ সালে খ্রিস্টানদের সেই লিওপারসালিয়া বা ফেব্রুয়ালিয়া পুজার নাম ও পদ্ধতি পরিবর্তন করে নিজ ধর্মের যাজক স্টিভ ভেলেন্টাইনের নামে অনুষ্ঠানের নামকরণ করেন।

শুরু হয় ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা বিশ্ব ভালবাসা দিবস ‘ এর পথচলা।

কিন্তু লটারীর কুপ্রভাবের জন্য মধ্যযুগে সমস্ত ইউরােপে ‘ ভ্যালেন্টাইন ডে ‘ উদযাপন দীর্ঘকাল নিষিদ্ধ ছিল।

পরবর্তীতে ইংরেজি সাহিত্যের জনক জিওফ্রে চসার তার পার্লামেন্ট অব ফাউলস ( ১৩৮২ ) এর মধ্যে ‘ ভ্যালেন্টাইন ডে ‘ নিয়ে লেখেন। এরপর উইলিয়াম শেকসপিওরসহ খ্যাতিমান সাহিত্যিকগণ এ বিষয়টিকে সাহিত্যের উপাদান হিসেবে নিয়ে আসেন।

১৬৬০ সালে রাজা চার্লস টু আবার দিবসটি পালনের প্রথা চালু করেন। এ দিবসিটি নিয়ে বিভিন্ন দেশে নানা বিতর্ক রয়েছে । তাই অনেক দেশেই এ দিবস পালনে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

শুধু ইসলামী বিশ্ব নয় , উপমহাদেশের অনেক দেশেই নিজস্ব সভ্যতা , সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবােধের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় দিবসটি পালনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

Related Articles

Back to top button