নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জয়ী করতে ৪ এমপি, সব ইউপি চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা একাট্টা হয়ে হুংকার দিয়ে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
ভোটারদের প্রভাবিত করতে এমপিদের নাম ও ছবি দিয়ে প্রকাশ্যেই এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে অপর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ কারণে ভোট কেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন অনেক ভোটাররা।
জানাযায়, কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও একই আসনের সাবেক এমপি (জাপা) লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) নজরুল ইসলাম বাবু ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনী। তার অনুসারীরা এমপি শামীম ওসমানের নির্দেশনা পীরের মত মানেন। যেই ভাবে একজন পীরের নির্দেশনা তার মুরীদরা পালন করেন।
দলীয় নেতা কর্মীদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতা ও সেই চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীর কর্মীরা।
তবে কোনো প্রার্থীকে জয়ী করতে নির্দেশনা দেয়ার কথা অস্বীকার করছেন এমপিরা। আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির প্রথম সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম (ঘোড়া), উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সদস্য বাবুল ওমর বাবু (আনারস), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু (মোটরসাইকেল) ও সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার (দোয়াত কলম)।
গত ২ মে প্রতীক বরাদ্ধের পর থেকেই মূলত শুরু হয়েছে প্রচার প্রচারণা। এই নির্বাচনে দলীয় এমপি-মন্ত্রীরা কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেনা বলে আওয়ামী দলীয়ভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু দলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাবুল ওমর বাবু (আনারস)কে নির্বাচিত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারসহ ৪ এমপি।
এই সকল এমপিদের নির্দেশে আনারস মার্কার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী সোহাগ রনি,সব ইউপি চেয়ারম্যান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অতিসম্প্রতি মোগরাপাড়া এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যনারে আনারস প্রতীকের একটি নির্বাচনী সভার আয়োজন করা হয়। সভার পূর্ব মূহুর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক লাইভে সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী সোহাগ রনি বলেন, জননেতা আব্দুল্লাহ আল কায়সারের নেতৃত্বে আনারস মার্কার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পরে সভামঞ্চে দাড়িয়েও তিনি বলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সারের নির্দেশ পেয়ে সকলের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে আপনাদের একত্রিত করেছি। এসময় আরো বিভিন্ন কথা বলে তিনি আনারস মার্কায় ভোট চান।
অপরদিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বারদী ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান হওয়া লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুল বলেন, দলীয় এমপি এবং দলের (উপজেলা আওয়ামী লীগ) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সার যাকে সমর্থন করেছেন আমরা মনে করে নেবো প্রধানমন্ত্রী তাকে সমর্থন করেছেন। আমাদের এমপি সাহেব যাকে সাপোর্ট করেছেন (আনারস মার্কা) আমরা এই অল্প সময়ের মধ্যে কাজ করলে বারদী ইউনিয়ন থেকে কামিয়াব হবো।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী সোহাগ রনি ও বারদী ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুলের এমন বক্তব্যের ভিডিও সংবাদ প্রতিনিধির হাতে এসেছে।
এছাড়াও আনারস প্রতিকের কর্মী সমর্থকরা কেউ কেউ তাদের ফেইসবুকে আনারস মার্কাকে জেতাতে এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সারের চুরান্ত সিদ্ধান্ত লিখেও পোষ্ট করছেন। এক প্রার্থীর পক্ষে এমপির সমর্থনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী সোহাগ রনি ফোন রিসিভ করেননি (একাধিকবার) ও বারদী ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুল এই কথার জবাব না দিয়ে লাইন কেটে দেন।
এদিকে আনারস প্রতিক ছাড়া অন্য প্রতীকের প্রার্থীরা এমপির বিভিন্ন সময়ের কথা তুলে ধরে দুঃখ প্রকাশ করে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করার বিষয়টি মোবাইল ফোনে অস্বীকার করেন। তবে কৌশলগত কারণে কেউ কেউ তার নাম ব্যবহার করছে বলে জানান। কিন্তু তার নাম ব্যহার করতে নেতাকর্মীদের নিষেধও করেননি তিনি।
এদিকে এমপির নির্দেশনা ও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইত্যাদি বলে এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানোর কারণে নির্বাচনে এমপির প্রভাব পড়ছে বলে অনেক ভোটার ভোট দিতে পারা না পারা নিয়েও আতঙ্কিত ও সংশয় প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন এলাকার অনেক ভোটার ভোট কেন্দ্রে যেতেও অনীহা প্রকাশ করছেন।