সোনারগাঁয়ে টাকার বিনিময়ে প্যানেল চেয়ারম্যান হচ্ছেন আওয়ামী লীগাররা
নিজস্ব সংবাদদাতা :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান পদে বসছেন আওয়ামী লীগের মেম্বাররা। এক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করছে স্থানীয় বিএনপির নেতারাই।
অভিযোগ রয়েছে টাকার বিনিময়ে ইউনিয়ন পরিষদগুলোয় নিরপেক্ষ অথবা বিএনপিপন্থী মেম্বারদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগপন্থী মেম্বারদের নাম ইউএনওর কাছে প্রস্তাব করা হচ্ছে।
এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র। প্যানেল চেয়ারম্যান পদে যারা নিয়োগ পাচ্ছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাদের সঙ্গে তাদের অন্তরঙ্গ বিভিন্ন ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভেসে বেড়াচ্ছে। কারো কারো দলীয় পদ পদবী সম্বলিত পোস্টারও শেয়ার করছেন নেটিজেনরা।
সবশেষ, বুধবার সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এর জন্য ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেম্বার নুরুল হক টিক্কা খান ওরফে টিক্কা কসাই এর নাম প্রস্তাব করা হয়। তিনি এর আগে ভোট ছাড়াই মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হন। পালাতক চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ ও তার বড় ভাই আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর এর আশীর্বাদ পুষ্ট ছিলেন টিক্কা খান।
এমনকি জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সঙ্গেও রাজনীতি করেছেন টিক্কা খান।
সনমান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই নুরুল হক টিক্কা মেম্বার ওরফে টিক্কা কসাই গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ছত্রছায়ায় নিজের দাপট ও আধিপত্য এতোটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, তার ওয়ার্ডে তার সাথে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দুঃসাহস দেখাতে পারে নাই। সনমান্দী ইউনিয়নে তার সন্ত্রাসী সাম্রাজ্যের ভয়ে তটস্থ থাকতো সবাই। গত ৫ আগষ্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিজের খোলস বদলান নুরুল হক টিক্কা।
মোটা অংকের অর্থ লেনদেনে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের হাত করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সনমান্দী ইউনিয়ন এর প্রতিটি ওয়ার্ডের মেম্বারদের কাউকে টাকা দিয়ে, আবার কাউকে হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের থেকে জোড়পূর্বক সমর্থন নিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন তিনি।
একই অভিযোগ রয়েছে উপজেলার পিরোজপুর ও বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনের ক্ষেত্রেও অর্থের বিনিময়ে বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে প্যানেল চেয়ারম্যান হয়েছেন আওয়ামীপন্থী মেম্বাররা।
বাদ পড়েছেন জনগণের জন্য নিবেদিত নির্দলীয় ও বিএনপির সমর্থিত মেম্বাররা।
পিরোজপুর ইউনিয়নে সাবেক ছাত্রদল নেতা ও জনপ্রিয় মেম্বার আফজাল হোসেনকে বাদ দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির নেতা আব্দুল মান্নান এর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। যা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বৈদ্দারবাজার ইউনিয়নেও প্যানেল চেয়ারম্যান পদে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা মামুন মেম্বার এর। অভিযোগ রয়েছে, এসব ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের নাম সুপারিশ করেছেন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
বিএনপি’র নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র-জনতার আত্মদানের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। কিন্তু এখনো যদি সেই পতিত স্বৈরাচারের দোসররাই চেয়ারম্যান হন, তাহলে আগের চেয়ারম্যানরা কী দোষ করেছিল? জনগণের মুক্তি মিলবে কী করে?
এব্যাপারে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, যা ঘটতেছে তা খুবই লজ্জাজনক। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে একটি স্বার্থান্বেষী চক্র। মোটা অংকের টাকা লেনদেনের যেমন অভিযোগ পাচ্ছি তেমনি জোরপূর্বক মেম্বারদের থেকে সই আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাচ্ছি। সরকারকে বলবো তারা যেন যাচাই-বাছাই করে এ সকল পদে নিয়োগ দেয়।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল বলেন, এটাও একটা ফ্যাসিস্ট আচরণ। যারা আগেই ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয়েছিলো। এখনো টাকার বিনিময়ে তারাই যদি নির্বাচিত হয়, তাহলে জনগণের চাওয়ার কী মূল্য থাকে? এটা খুবই নিন্দনীয় ব্যাপার। দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি অপকর্ম করে তাদের বিষয়ে আমরা হাইকমান্ডকে জানাবো।
প্যানেল চেয়ারম্যান হতে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে অস্বীকার করে অভিযুক্ত নুরুল হক টিক্কা খান বলেন, আমি নিজে হাতে কাউকে কোন টাকা দেইনি। আমার হয়ে অন্য কেউ দিতে পারে। আমি আগেও প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলাম এখনো সবার সম্মতি নিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই ইউএনও’র কাছে প্যানেল চেয়ারম্যানের জন্য নাম প্রস্তাব করেছি। তাছাড়া এই সকল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান করার মতো বিএনপিতে আগ্রহী কাউকে পাওয়া যায়নি। যাদেরকে যোগ্য পাওয়া গেছে এবং সবাই যার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে তার নামই প্রস্তাব করা হয়েছে।
এব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা বলেন, সাধারণত প্রত্যেকটি ইউনিয়নেই আগেই প্যানেল নির্বাচন হয়ে থাকে। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সেই প্যানেল থেকেই একজন দায়িত্ব পালন করবে। তবে তাদের ব্যাপারে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আপত্তি থাকে তাহলে সকলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই ভিত্তিতে আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে নাম প্রস্তাব করেছি। এখানে দলীয় বিবেচনায় নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।