ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে না. গঞ্জে নৌযান শ্রমিকদের মানববন্ধন ও মিছিল
নিজস্ব সংবাদদাতা, সোনারগাঁ টাইমস২৪ ডটকম :
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারী সবুজ শিকদার বলেছেন, সারাদেশে করোনা মহামারীর মধ্যে একমাত্র নৌপথের শ্রমিক কর্মচারীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীপথে পণ্য পরিবহন করে দেশকে সচল রেখেছেন। কিন্তু আকস্মিক তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই নৌযান বন্ধ রেখে আর্ত চিৎকার করছে।
যদি তেলের মূল্য না কমানো হয় তাহলে আমরা আশঙ্কা করছি সারাদেশে অসংখ্য নৌযান বন্ধ হয়ে স্ক্র্যাবে পরিণত হবে। আজকে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্কটল্যান্ডে সেদেশের বিনিয়োগকারী ও প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু তেলের মূল্য এভাবে বৃদ্ধি পেলে নদীপথে চলাচলকারী জাহাজগুলো বন্ধ হয়ে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।
আজকে নদীপথে ইজারার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী হচ্ছে। সরকার যদি ইজারার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করতে চায় তাহলে যেন বিআইডব্লিউটিএ’র নিজস্ব লোক দিয়ে রাজস্ব আদায় করা হয়। কিন্তু ইজারা নিয়ে সন্ত্রাসীরা সেখানে ব্যাপক চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী করছে। প্রতিবাদ করতে গেলে শ্রমিকরা অপমানিত লাঞ্ছিত নির্যাতিত রক্তাক্ত হচ্ছে। অবিলম্বে শীতলক্ষ্যা বুড়িগঙ্গার ইজারার টোল আদায়ের নামে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় নৌযান ব্যবসায় সম্পৃক্ত মালিক শ্রমিক দিশেহারা, নৌপথে বাল্কহেড ট্রলার দিয়ে পরিবহনকৃত সকল পণ্যের ভাড়া বৃদ্ধি করা এবং নৌপথে ডাকাতি, সন্ত্রাস কথিত ইজারার টোলের নামে চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন সবুজ শিকদার।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ থেকে একটি নৌযানকে ঢাকায় আসতে ৬০ থেকে ৭০টি স্পটে নৌ পুলিশকে সেলামি (চাঁদা) দিতে হয়। আমরা এ বিষয়ে নৌ পুলিশের ডিআইজিকেও জানিয়েছি। নৌ পুলিশ নৌ শ্রমিকদের আন্দোলনের ফসল। নৌ পুলিশের ডিআইজি সাহেব অত্যন্ত ভাল মানুষ। কিন্তু নৌ পুলিশের মধ্যে কিছু অসাধু কর্মকর্তা আছে যারা নদীপথে ২ থেকে ৩টি ট্রলার নামিয়ে দিয়ে ট্রলার চালকের মাধ্যমে সেলামি নেয় আর নৌ পুলিশের সদস্যরা সেখানে ঘুপটি মেরে বসে থাকে।
আমাদের ন্যায্য মজুরী ২০ হাজার টাকা ও মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ ১২ লাখ টাকার দাবিতে আমরা যখন আমাদের প্রাণের দাবিতে আন্দোলন করবো সেখানে হঠাৎ কেন তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হলো। আজকে ২০২১ সালে নৌযান শ্রমিকদের মজুরীর গ্যাজেট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এভাবে কারণে নৌযান শ্রমিকদের মজুরীর অধিকার অনিশ্চয়তার মুখে।
নৌযান শ্রমিকরা বর্তমানে মানবেতন জীবন যাপন করছে। তেলের মূল্যের বৃদ্ধির কারণে সারাদেশে পণ্যের উপর প্রভাব পড়বে। আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে কিছু দুস্কৃতিকারী চক্রান্ত করছে। তারা সরকারের সুনাম নষ্ট করার পায়তারা করছে। সরকার নৌপথে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের নৌপথকে খনন করার ২০টি ড্রেজার ক্রয় করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেও নৌপথকে খনন করতে অসংখ্য ড্রেজার ক্রয় করেছেন। কিন্তু নদীপথগুলো সঠিকভাবে খনন করতে ড্রেজারগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, বালুমহালগুলোতে আনলোড পয়েন্টে হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধি করা হলো। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে চুক্তি হলেও সেগুলোর কোন তোয়াক্কা করা হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে পণ্যবাহী নৌযানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে যাত্রীবাহী লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে একটি জাহাজ আসতে ১৫০০ থেকে ১৮০০ লিটার ডিজেল লাগে। মূল্য বৃদ্ধির কারণে বহু টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু সে তুলনায় কিন্তু জাহাজের ভাড়া বেশী চাইলে কেউ দিতে রাজী হবেনা। আজকে নৌযান শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তারা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেনা। এই অবস্থা চলতে থাকলে সারাদেশে মানুষ সরকারের বিপক্ষে চলে যাবে। অবিলম্বে নৌযান শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরী ২০ হাজার টাকা ও মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ ১২ লাখ টাকা প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি নৌযান শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন যদি ডিজেলের বর্ধিত মূল্য কমানো না হয় এবং নৌপথকে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজমুক্ত করা না হয় তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিসঞ্চয় করে এই আন্দোলনকে বেগবান করবো। আপনারা ভয় পাবেননা। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের দাবি অবশ্যই বাস্তবায়ন হবে।
বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ বাল্কহেড ট্রলার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ৫নং খেয়াঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যার তীরে গিয়ে শেষ হয়।
বাংলাদেশ বাল্কহেড ট্রলার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কাওটাইল শাখার সহসভাপতি রাজীব হোসেন রনির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা শ্রমিকলীগের সহসভাপতি মো: শহীদুল্লাহ প্রধান, সহসভাপতি এস এম মনজুর আহমেদ, বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন চুন্নু, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক কবির হোসেন, সহ সম্পাদক আক্তার হোসেন, শ্রমিকলীগ নেতা সোহেল সরদার, নিজামউদ্দিন বিপ্লব, সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মো: শাহাদাৎ হোসেন, সারুলিয়া শাখার সভাপতি শামীম আহমেদ, মুন্সিগঞ্জ শাখার সেক্রেটারী ফারুক ইসলাম প্রমুখ।