বিয়ের রাতেই মোছাঃ মেঘনা খাতুন( ১৬) নামের নববধুর ঝুলন্ত লাশ শশুর বাড়ির আম গাছ থেকে নামানোর পর সেখান থেকে উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার দাইরপোল গ্রামের এই ঘটনার মেঘনা খাতুন দাইরপোল গ্রামের ফজলুর রহমান(হকার ফজলু) এর ছোট মেয়ে। সে শ্রীপুর সরকারি কলেজে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, গত ০৭এপ্রিল ২০২১ ইং তারিখ বুধবার দাইরপোল গ্রামের চঞ্চল শিকদারের ছেলে আরাফাত হোসেন সাব্বির বাসা থেকে পালিয়ে ২০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিবাহ করে একই গ্রামের ফজলুর রহমান (হকার ফজলু) এর ছোট মেয়ে মোছাঃ মেঘনা খাতুনকে। তাদের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বলে জানান পরিবারের লোকজন। বিয়ের খবর পারিবারিক ভাবে জানাজানি হলে দুই পরিবারের মধ্যে বিবাধের সৃষ্টি হয়। গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে মিমাংসার চেষ্টা করা হচ্ছিলো বলে জানা গেছে । এরই মধ্যে ১০ এপ্রিল ২০২১ শনিবার রাতে ছেলে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে তাদের সামাজিক ভাবে বিবাহ দেওয়া হয়। বিবাহ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট পরই নববধু লাশ তার শশুড় বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা আম গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় নববধু মেঘনার শশুর বাড়ির লোকজন। তৎক্ষনাৎ শ্রীপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে নিহত নববধুর পিতা ফজলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, এই ঘটনা গত ৭ তারিখের আমার মেয়েকে চঞ্চল শিকদারের ছেলে সাব্বির শিকদার নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে আমার মেয়ের সাথে অবৈধ কাজ কাম করে আমার বাড়িতে ফেরত দিতে যায়। আমি তখন প্রশাসনসহ তার বাড়িতে রিটার্ন দিই, সেই রাত্রে আমার মেয়েকে তাদের বাড়ি রেখে পরের দিন বেলা ১০ টায় মাগুরা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা কাবিন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।গতকাল (১১ এপ্রিল শনিবার) রাতে তারা আমার মেয়েকে আবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করে। বিয়ের অনুষ্ঠানের পরই হঠাৎ চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনতে পাই এবং আমরা সবাই আমার মেয়ের শশুর বাড়িতে যায়। মেয়ে যখন গাছে ঝুলে ছিলো তখন আমরা গিয়ে দেখি ছেলের বাবা, ছেলের মা, আর ছেলে আমার মেয়ের পা ধরে ঝুলে টানাটানি করছে। প্রশাসন যাওয়ার আগেই তারা লাশ নামিয়ে মাথায় পানি ঢালাঢালি করে। আমি এই মর্মে সরকারের কাছে,জনগণের কাছে, জনপ্রতিনিধিদের কাছে, চেয়ারম্যানের কাছে, আমার মেয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই। যেন আমার মত আর কোন বাবার মেয়েকে এই রকম নিষ্ঠুর হত্যার শিকার না হতে হয়।
নববধু মেঘনার মা শিউলি খাতুন ও বড় চাচা মেঘনার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানা ইনচার্জ সুকদেব রায় জানান, গতরাতে শ্রীপুর থানার ৩নং শ্রীকোল ইউনিয়নের দাইরপোল গ্রামের মোছাঃ মেঘনা খাতুন কে একই গ্রামের আরাফাত রহমান সাব্বিরের সাথে বিবাহ হয়। এর পরই মেয়েটির লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এটি আত্মহত্যা বা পরিকল্পিত খুন কিনা সেটি জানার জন্য লাশটি ময়নাতদন্তের মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে আসল ঘটনা সম্পর্কে আমরা জানতে পারবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বর আরাফাত হোসেন সাব্বির, বাবা চঞ্চল শিকদার, ও বরের মাকে (নববধুর শাশুড়িকে) থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
মেঘনার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।