বিএনপির সদস্য পদ নবায়ন করলেন তারেক রহমান
বিশ টাকা দিয়ে নিজের প্রাথমিক সদস্য পদ নবায়ন করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সোমবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি’র উদ্বোধন করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অনলাইনে চাঁদা দিয়ে নিজের সদস্যপদ নবায়ন করেন। একই সঙ্গে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতসহ সিনিয়র নেতারাও ফরম পূরণ করে তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেন।
ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, মেধাবীদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। পরিশ্রমী, সততা, আদর্শ যাদের আছে এসব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আরও বেশি করে দলের কাছে নিয়ে আসতে হবে। দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। আগামী দিনে আমাদের ভালো মানুষ দরকার। কারণ এই রাষ্ট্রটিকে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার ধ্বংস করে দিয়েছে, অনেক পেছনে নিয়ে গেছে। কাজেই দলকে যদি পুনর্গঠিত করতে হয় সেরকম মানুষ দরকার। সেই রকম মানুষকে বের করে নিয়ে আসতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের সমর্থন পাওয়ার পরে দেশকেও পুনর্গঠন করতে হবে। দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য, রাষ্ট্রকে মেরামত করার জন্য ৩১ দফা দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছি। সেটিকে যদি বাস্তবায়ন করতে হয় অবশ্যই দলকে ঐক্যবদ্ধ পুনর্গঠিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকের দিন বিএনপির নেতাকর্মীদের আনন্দের দিন। যে কর্মসূচি শুরু করলাম, সামনে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা আছেন। নেতৃবৃন্দ আপনাদের মাধ্যমে এই সাংগঠনিক কর্মসূচিটি সফল করতে হবে।
কাজেই আপনাদের দিকে দল তাকিয়ে আছে। জেলা, থানা, পৌর, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে যেসব নেতৃবৃন্দ আছেন তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেভাবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়ে সবাইকে সংগঠিত করে ঐক্যবদ্ধভাবে সফল করেছিলেন বিভিন্ন কর্মসূচি, একইভাবে এই কর্মসূচিটিও সফল করবেন।
তারেক রহমান বলেন, তৃণমূলকে সংগঠিত করতে হবে। এখন বেশি করে কাজ করতে হবে, বিশাল কাজ আমাদের সামনে আছে। আসুন যে উৎসাহ, যে দেশপ্রেম নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গুম-খুনের পরেও শত অত্যাচার-নির্যাতনের পরেও আমরা দমে যাইনি। হাজারো নেতাকর্মীদের নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। ঠিক একইভাবে আসুন আবারও দলকে পুনর্গঠিত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। এই দলকে যত শক্তিশালী পুনর্গঠিত করতে পারব, আগামী দিনে আমাদের ৩১ দফার মাধ্যমে রাষ্ট্র দ্রুত আমরা মেরামত করতে পারব। রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করতে পারব।
এর আগে তারেক রহমান সদস্য ফরম পূরণ করে সদস্য নবায়ন ফি সহ ইমেলে পাঠান।
তিনি বলেন, আমি ফরম পূরণ করে এখানকার মুদ্রায় ১৫ পেন্সসহ পাঠিয়েছি।
ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর ২০১৭ সালে বিএনপির সর্বশেষ প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়নের কর্মসূচি হয়েছিল দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মাধ্যমে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন রাজনীতিতে যে প্রতিযোগিতা চলছে, এটি কিন্তু স্লোগান দেওয়ার প্রতিযোগিতা নয়। এখন কিন্তু মেধা এবং বুদ্ধির প্রতিযোগিতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কেমন লিখতে পারেন, কে কেমন কথা বলতে পারেন তার প্রতিযোগিতা চলছে। এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। শুধু স্লোগান দিয়ে সামনের যুদ্ধ জয় করতে পারব না।
মির্জা ফখরুল বলেন, যারা সদস্য ছিলেন তাদের পদই নবায়ন হবে। এ নবায়ন ফরমগুলো জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে যাবে। এক্ষেত্রে আমাদের সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদককে এই কাজ নিশ্চিত করতে হবে। এটি করা গেলে এক মাসের মধ্যে তৃণমূলে পৌঁছে যেতে পারব। এক্ষেত্রে সদস্যদের জানাতে হবে, আপনার সদস্যপদ নবায়ন হচ্ছে। যদি তিনি না জানেন তবে আগ্রহ হারাবেন।
এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, অতীতে যেটা হয়েছে, বিশেষ করে আমাদের যারা এমপি পদপ্রার্থী, তারা সবগুলো কিনে নিয়ে চলে গেছেন। এই জিনিসটা খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, এটি যেন সাংগঠনিকভাবেই যায়। যারা এমপি পদপ্রত্যাশী তারা যেন আবার সেগুলো নিয়ে চলে না যায়।
রোববার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে কিছু কর্মীর স্লোগানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটি রাজনীতি না। কোনো রাজনৈতিক কর্মীর মুখ থেকে এ ধরনের স্লোগান আসা উচিৎ নয়। এটি রাজনীতির কত বড় দেউলিয়াপনা হতে পারে তা এখান থেকে বোঝা যায়। এ জায়গাটাতে আমাদের একটা চরম দৈন্যতা আছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিৎ। এক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উদ্যোগ নেবেন বলে নিজের বিশ্বাসের কথা জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিটি জেলা-উপজেলায় রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ খুব জরুরি। কিভাবে বক্তৃতা করতে হবে, কিভাবে একটা সভা চলে, কিভাবে উপস্থাপনা করবেন, এড্রেস কিভাবে করবেন-এই জিনিসগুলোর খুব বেশি প্রয়োজন। সত্যিকার অর্থে আমাদের একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করা দরকার। আমাদের এখন সত্যিকার অর্থেই একটি আদর্শিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হতে হবে।
তিনি বলেন, সামনে যখন আমরা দলে রিক্রুট করব তখন যেন ভালো ও মেধাবী মানুষদের সদস্য করি। দল যেন সামনে আরও শক্তিশালী হয়।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত বক্তব্য দেন। উদ্বোধনী দিনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যার শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, শরীফুল আলম, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসাংগঠিত সম্পাদক, মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত নেতৃবৃন্দ তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেন।