জাতীয়

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ৮৩৪ জন, আহত প্রায় ১৫ হাজার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। গত বুধবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এটি প্রকাশ করেছে। শহীদ ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অধিদপ্তর’ করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেই তালিকা অনুযায়ী, এ অভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা ৮৩৪ এবং আহতের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। মূলত এ গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি রক্ষা করতে এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে কাজ করবে এ অধিদপ্তর।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হরিদাস ঠাকুর স্বাক্ষরিত গেজেটে ‘মেডিক্যাল কেস আইডি’, শহীদদের নাম, বাবার নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে কে কোথায় কোন তারিখে শহীদ হন, তা গেজেটে উল্লেখ করা হয়নি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রথম শহীদ হন আবু সাঈদ। গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে নিহত হন। গুলি লাগার মুহূর্তে রাজপথে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা

আবু সাঈদের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে মানুষ শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে। এ আন্দোলনই রূপ নেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

সরকারের গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছিল গত ২১ ডিসেম্বর। সেখানে ৮৫৮ জন শহীদের নামের পাশাপাশি আহতদের তালিকায় ১১ হাজার ৫৫১ জনের নাম ছিল।

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে গত বছর শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে তীব্রতা পায়। ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে রংপুরের আবু সাঈদসহ সারাদেশে ছয়জন নিহত হওয়ার পর আন্দোলন সহিংস আকার ধারণ করে। আন্দোলন থামাতে দমন-পীড়ন আর মৃত্যুর মিছিলের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার ঢাকামুখী জোয়ারের মধ্যে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জুলাই-আগস্টে নিহত এবং আহতদের তালিকা তৈরি করতে গত ১৫ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার শহীদদের নাম প্রকাশ করে প্রথম গেজেট হলো।

মৃত্যুর আগে আন্দোলনের মধ্যে ‘পানি লাগবে, পানি’ মুগ্ধর এই কথা আমাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মুগ্ধ। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও বিক্ষোভকারীদের হাতে পানির বোতল তুলে দিচ্ছিলেন মুগ্ধ। টিয়ার গ্যাসে জ্বলতে থাকা চোখ মুছতে মুছতেই পানি নিয়ে ছুটে যাচ্ছিলেন সবার কাছে। কিন্তু এর মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায়, ঢাকায় দুপুরের উত্তাপে বিশ্রাম নেওয়ার সময় একটি বুলেট তার কপালে এসে বিঁধে; শহীদ হন মুগ্ধ। সাঈদ-মুগ্ধদের আত্মত্যাগ দেশকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে। কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা এলাকার সন্তান ওয়াসিম আকরাম ছিলেন চট্টগ্রামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখতেন। তার মৃত্যুর তিন মাসের মাথায় অনার্স তৃতীয় বর্ষের প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। শহীদ হওয়ার আকাক্সক্ষা নিয়ে রাজপথে নেমে শহীদ হওয়া, প্রকাশিত ফলে কৃতিত্বের স্বাক্ষর, পড়াশোনা শেষে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন- সবই এখন অতীত। আর এসবই এখন স্বজন, সহযোদ্ধাদের অশ্রুসিক্ত করে তুলছে। কেউ ভুলতে পারছেন না ওয়াসিম আকরামকে। গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর স্টেশনে সমাবেশ ছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে মাঠে থাকা শিক্ষার্থীদের। কিন্তু সেখানে সশস্ত্র ক্যাডারদের অবস্থান নেওয়ার কারণে ছাত্ররা তাদের সমাবেশ মুরাদপুর সরিয়ে নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চতুর্দিক থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে ক্যাডাররা একযোগে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিতে প্রথমে আহত হন ওয়াসিম আকরাম। এ রকম শহীদদের তালিকা নিয়ে বুধবার গেজেট প্রকাশ করল সরকার। এক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাস্থল ও দিনক্ষণ উল্লেখ করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button