সারাদেশ

১৫ বছর পর রাজনীতির মাঠে আলোচনায় জামায়াত

প্রায় ১৫ বছর পর রাজশাহীতে প্রকাশ্যে কর্মিসম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ১৮ জানুয়ারি এ কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে ওই অঞ্চলে রাজনীতির মাঠে জোর আলোচনায় এসেছে দলটি। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারী আচরণ ও দমন-পীড়নের কারণে এতদিন বড় ধরনের কোনো প্রকাশ্য কর্মসূচি করতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী। দেড় দশক পর এবার রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান মাঠে দলটির কর্মিসম্মেলন ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

দলটির নেতারা জানিয়েছেন, এবারের কর্মী সম্মেলন হবে রাজশাহীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জমায়েত। সম্মেলন সফল করতে রাজশাহী মহানগর ও জেলায় এক মাস ধরেই ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নগরজুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ এবং পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে মাদ্রাসা মাঠের পশ্চিম দিকে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মাঠের প্রস্তুতিকাজ পরিদর্শন করেছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা।

জামায়াতের কর্মী সম্মেলনের ফেস্টুন-ব্যানারে জুলাই বিপ্লবে শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধ, রাজশাহীর শহীদ আলী রায়হান এবং শহীদ সাকিব আনজুমের ছবি স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আমলে ফাঁসি দেওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও অধ্যাপক গোলাম আযমের ছবি ও তাদের ‘বাণী’ ঠাঁই পেয়েছে। জামায়াত নেতাদের প্রত্যেককে ‘শহীদ’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্মেলনে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেছেন জামায়াতের নেতারা। সম্মেলন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, সম্মেলন ঘিরে পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে। পোশাকধারী এবং সাদা পোশাকের পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া সম্মেলন ঘিরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের নিজস্ব ভলান্টিয়াররাও নিরাপত্তা রক্ষায় সহযোগিতা করবেন।

জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর আমির অধ্যাপক ড. কেরামত আলী জানান, কর্মী সম্মেলন ১৮ জানুয়ারি শনিবার সকাল ৯টায় শুরু হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। এর মাধ্যমে তিনি রাজশাহীতে প্রথম প্রকাশ্য জনসভায় অংশ নিচ্ছেন। আরও বক্তব্য রাখবেন জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা দক্ষিণের আমির ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন।

সকাল ৯টায় মাদ্রাসা মাঠে কর্মী সম্মেলন শুরু হবে, দুপুর ২টায় নাইস কমিউনিটি সেন্টারে মহিলা কর্মী সম্মেলন, বিকাল ৩টায় চিকিৎসকদের নিয়ে সমাবেশ এবং মাগরিবের পর চেম্বার ভবনে ব্যবসায়ী সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। এসব কর্মসূচিতে যোগ দেবেন ডা. শফিকুর রহমান।

সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জামায়াতের মিডিয়া ও প্রচার সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন বলেন, রাজশাহীতে আমাদের শেষ বড় সমাবেশ হয়েছিল ২০১০ সালে। এরপর দীর্ঘ সময় কোনো প্রকাশ্য অনুষ্ঠান হয়নি। এবার কর্মী সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীরা অত্যন্ত উজ্জীবিত। মাদ্রাসা মাঠ ছাড়িয়ে গোটা নগরীই জনসমাবেশে পরিণত হবে।

রাজশাহী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি গোলাম মর্তুজা বলেন, কর্মী সম্মেলনে রাজশাহী মহানগরী ও জেলার সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। অন্য জেলা থেকে কোনো যানবাহন বা সদস্য অংশ নেবে না। জামায়াতের শৃঙ্খলা বিভাগ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button