জাতীয়

টিউলিপকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পাওয়ার তথ্য সামনে আসার পর যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বেশ চাপে পড়েন তিনি।

যুক্তরাজ্যের সরকারের অনেকেই এ নিয়ে সমালোচনা করছেন। বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। এজন্য ওই পদে দায়িত্ব পালনের জন্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের শর্টলিস্টও করা হয়েছে।

যদিও বাংলাদেশে আর্থিক দুর্নীতির মামলার তদন্তে যুক্তরাজ্যের অর্থ ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপে ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়লেও অতীতে তার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার।

বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে টিউলিপকে তার পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হলে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন এমন প্রার্থীদের নাম প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমারের জ্যেষ্ঠ সহযোগীরা বিবেচনা করছেন।

ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তারা সপ্তাহান্তে যুক্তরাজ্যের এই ট্রেজারি মন্ত্রীর স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন এমন প্রার্থীদের চিহ্নিত করেছেন বলেও জানা গেছে। গত সোমবার টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডসের ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার লাউরি ম্যাগনাসের কাছে নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানানোর প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়ার আগেই কর্মকর্তারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করেন।

সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস বলছে, যদিও প্রদানমন্ত্রী স্টারমার বলেছেন, তিনি টিউলিপ সিদ্দিকের উপর পূর্ণ আস্থা রেখেছেন এবং ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র টিউলিপকে তার পদ থেকে সরিয়ে ওই পদে দায়িত্ব পালনের জন্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরির বিষয়টিকে ‘সম্পূর্ণ অসত্য’ বলে দাবি করেছেন, কিন্তু তারপরও টাইমসকে বলা হয়েছে, টিউলিপকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে কে তার উত্তরসূরি হতে পারেন তা প্রধানমন্ত্রী স্টানমারের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে কেউ কেউ অন্তত অনানুষ্ঠানিকভাবেই বিবেচনা করছেন।

মূলত টিউলিপকে ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য, তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। কিন্তু তার জন্মভূমি বাংলাদেশেই এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি টোরি এমপিরাও টিউলিপের পদত্যাগ দাবি করেছেন। ব্রিটেনের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা টিউলিপের উদ্দেশে বলেন, ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তিনি যেন ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

টোরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিককে তার সম্পত্তির লেনদেনের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে এবং ব্যাখ্যা করতে হবে আসলে কী ঘটেছে এবং কেন। যদি তিনি তা না করেন তবে মন্ত্রী হিসেবে তিনি তার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন না।’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে লন্ডনের কিং’স ক্রস এলাকায় অবস্থিত ২ শয্যাকক্ষের একটি ফ্ল্যাট ২০০৪ সালে টিউলিপ সিদ্দিককে আবদুল মোতালিফ নামের এক ডেভেলপার উপহার দিয়েছিলেন বলে জানানো হয়। মোতালিফ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) দিয়ে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন আবদুল মোতালিফ। বেশ সস্তাতেই পেয়েছিলেন তিনি, কারণ একই বছর আগস্ট মাসে সেই ফ্ল্যাটটির পার্শ্ববর্তী আরেকটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা)।

যুক্তরাজ্যের ইলেক্টোরাল রোল ডেটার তথ্য বলছে, ২০০৪ সালে উপহার হিসেবে পাওয়ার পর কিং’স ক্রসের সেই ফ্ল্যাটটিতে কয়েক বছর ছিলেন টিউলিপ। এরপর তার অন্য ভাই-বোনরা ছিলেন আরও বেশ কয়েক বছর। বর্তমানে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছেন টিউলিপ। সেখান থেকে বাৎসরিক ৯০ হাজার পাউন্ড (১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা) উপার্জন হচ্ছে তার।

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ পর্যন্ত লেবার পার্টির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য শাখার ‘লবিং ইউনিট অ্যান্ড ইলেকশন স্ট্র্যাটেজি টিম’-এ সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি। তার নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রেও এ সংশ্লিষ্টতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

তবে কোনো নির্বাচনী হলফনামায় ফ্ল্যাটটির বিষয়ে উল্লেখ করেননি টিউলিপ। হলফ নামায় তিনি যুক্তরাজ্যের হাইগেট এবং হ্যাম্পস্টেড এলাকার ফ্ল্যাটের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন। ৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ বর্তমানে পূর্ব লন্ডনে মুজিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে থাকেন। মুজিবুল ইসলাম আওয়ামী লীগের একজন সাবেক এমপির সন্তান।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button