সবাইকে ক্ষমা, কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ নয়, শান্তির বার্তা দিলেন: তালেবান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সোনারগাঁ টাইমস২৪ ডটকম :
একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর কাবুলে প্রবেশের দু’দিনের মাথায় প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন করেছে আফগানিস্তানের সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবান।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীর কয়েকজন নেতাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগানিস্তানের শান্তির জন্য সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে এবং কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। কারো বিরুদ্ধে কোনও ধরনের প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তালেবান শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চায়’ বলে ঘোষণা দেন জাবিহুল্লাহ। আমরা অভ্যন্তরীণ অথবা বহিরাগত কোনও শত্রু চাই না।
একই সঙ্গে ইসলামি বিধি-বিধান অনুযায়ী নারীর অধিকার রক্ষায় তালেবান অঙ্গীকারবদ্ধ। নারীরা কাজের এবং পড়াশোনার অনুমতি পাবেন। তারা সমাজে অত্যন্ত সক্রিয় থাকবেন; তবে তা হবে ইসলামি কাঠামোর মধ্যে থেকে।
তিনি বলেছেন, সাবেক সৈন্য এবং পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে না তালেবান। আফগান সরকারের সাবেক সৈন্যদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাহিনীর হয়ে কাজ করা ঠিকাদার এবং অনুবাদকদের জন্যও সাধারণ ক্ষমাও ঘোষণা করা হয়েছে।
কোনও ধরনের প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। যেসব তরুণ এখানে বেড়ে উঠেছেন, তাদের আমরা যেতে দিতে চাই না। তারা আমাদের সম্পদ। কেউ তাদের দরজায় কড়া নেড়ে জিজ্ঞেস করবে না, তারা কাদের জন্য কাজ করছেন। তারা নিরাপদে থাকবেন। কেউ তাতে সমস্যার সৃষ্টি করবে না। কেউই আপনাদের ক্ষতি করবে না। কেউ আপনার দরজায় কড়া নাড়বে না।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানে বেসরকারি গণমাধ্যম অবাধে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। নিজস্ব সাংস্কৃতিক কাঠামো অনুযায়ী তালেবান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।
বেসরকারি গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করবে, তারা সেটা চান। কিন্তু সাংবাদিকদের জাতীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কাজ করা উচিত নয়। দেশের ঐক্যের স্বার্থেই তাদের কাজ করা উচিত এবং শান্তির জন্য তারা সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। যাতে সমাজের সব পক্ষই আমাদের সাথে থাকে, সেটি আমাদের যোদ্ধা-সমর্থক, আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করব। শত্রুপক্ষের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে যারা মারা গেছেন, সেটি তাদের নিজেদের দোষেই হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে পুরো দেশ জয় করেছি। সরকার গঠন হয়ে গেছে, সবকিছু আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। সরকারের কাঠামো নিশ্চিত হলেই ভবিষ্যতে আফগানিস্তান কীভাবে চলবে সেটি পরিষ্কার করা হবে।
আল-কায়েদার যোদ্ধা অথবা অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তালেবান মুখপাত্র বলেন, আফগানিস্তানের মাটি কারও বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে দেওয়া হবে না।
ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া যাতে মসৃণভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য তালেবানের যোদ্ধারা কাবুলের প্রবেশদ্বারে তাদের অগ্রযাত্রা থামানোর পরিকল্পনা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন জাবিহুল্লাহ।
কিন্তু নগরীর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহরে প্রবেশ করা ছাড়া তালেবানের কোনও উপায় ছিল না, বলেছেন তিনি।
জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, বিশ বছর আগেও আমাদের দেশ মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। আজও আমাদের দেশ মুসলিম রাষ্ট্র। কিন্তু অভিজ্ঞতা, পরিপক্কতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে বিশ বছর আগের তালেবানের সাথে আজকের তালেবানের বিশাল তফাৎ রয়েছে। আমরা এখন যেসব পদক্ষেপ নেব তার সাথে ওই সময়কার ফারাক আছে। আর এটা বিবর্তনের ফসল।
যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা যখন আফগানিস্তান থেকে কূটনীতিক এবং নিজ নাগরিকদের সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে সেই সময় তালেবানের প্রথম এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। তালেবানের যোদ্ধারা রাজধানী কাবুলের চারপাশ ঘিরে ফেলার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ‘রক্তপাত এড়াতে’ ওমানে পালিয়ে গেছেন রোববার।
কয়েক দিনের ঝটিকা অভিযানে দেশের মোট ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর বেশিরভাগের পর কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পরদিন সোমবার আফগানিস্তানে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। ওইদিন কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন কূটনীতিক এবং নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা বিমানে হুড়োহুড়ি করে ওঠার চেষ্টা করেন তালেবানের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হাজার হাজার আফগান।
সেখানে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে আফগানিস্তানের গণমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে। এছাড়া বিমানের চাকায় চেপে দেশ ছাড়ার চেষ্টার সময় উড়ন্ত বিমান থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ে তিনজনের প্রাণহানি ঘটে।