পরাজিত হবার ভয়ে সংস্কার ও নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে – গোলাম পরওয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও ঐক্যকে অটুট রেখে জাতীয় ঐক্যের পরিবেশ তৈরী করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। যারা সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চান, তারা সংবিধানের দোহাই দেন। সংস্কার করতে গেলে , আইন লাগে , সংবিধান লাগে, সংসদ লাগে এ সকল ইস্যূ সামনে এনে একটি বিতর্ক তৈরী করা হচ্ছে। আমি তাদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই ড. ইউনূস এসেছিলেন কোন আইনে, কোন সংবিধানে লেখা ছিল, কোন বিধিতে হলো। উপদেষ্টা পরিষদ হলো, হাসিনা চলে গেল। শপথ হলো কোন আইনে। সংবিধান এবং আইন কি? সংবিধান হলো জনআকাঙ্খা, জনগন যা চায়। কোটি কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার লিখিত রূপ হচ্ছে সংবিধান। অতীতেও কেয়ারটেকার সরকার গঠনের সময়ও সংবিধান মানা হয়নি। সূতরাং সংবিধান ও আইনের কথা বলতে গেলে এই অন্তবতর্ীকালীন সরকাইতো বেআইনী । উপদেষ্টাও বেআইনী । রাষ্ট্র এবং জনগনের আকাঙ্খা পূরনে একটি অবাধ নিরোপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আইনের যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন , তা যদি না করি তাহলে ১৪ , ১৮ ও ২৪ এর মতো নির্বাচন হবে। এতো রক্ত দিয়েছি কি আবার সেইরকম নির্বাচনের জন্য? রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানের সংস্কার তো আমরা চাচ্ছি না। আর অন্তর্বর্তিকালীন এ সরকারের পক্ষে সকল সংস্কার করা সম্ভব না এটা আমরাও জানি। তবে সূষ্ঠ গ্রহণযোগ্য নির্বচানের জন্য নির্বাচন কমিশন , পুলিশ , জনপ্রশাসন সহ সরকারের সংশ্লিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অর্গানের সংস্কার করতে হবে। সেখানে আগের ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের দোষররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের দিয়ে নির্বাচন করলে সকল শহীদের রক্তদান বৃথা যাবে। জুলাই অভ্যুত্থানের গণ আকাঙ্খাই সেই সংস্কার ও পরিবর্তনের অধিকার রাখে। এই কাজে সকলকে সহযোগীতা করতে হবে। যারা এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা না করে আইন কানুন, বিধির দোহাই দিয়ে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ করার বা সমস্য তৈরি করার চেষ্টা করবে , বুঝতে হবে তারা হয়তো সুষ্ঠ নির্বাচনে পরাজিত হবার ভয় করছে অথবা মাস্তানি করে কেটেকুটে ভোটের বাক্স ভর্তি করে বিজয়ী হতে চায়। জামায়াতে ইসলামির লোকেরাতো ভোট কাটতে পারবে না। আমরাতো মাস্তান না। আমাদের তো চাঁদাবাজ নাই আমরাতো ভোটকেন্দ্র দখল করতে পারিনা। তাই নির্বাচন নিরোপেক্ষ না হলে আমাদের সমস্য বেশি।
তিনি শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর জেলা শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তবে এসব কথা বলেন। গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর মুক্তিযোদ্ধা কলেজ মাঠে এ কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুর জেলা শাখার আমীর ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ড. মোঃ সামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মোঃ আবুল হাশেম খান,গাজীপুর মহানগর শাখার আমীর অধ্যাপক মুহাঃ জামাল উদ্দিন, সিনিয়র নায়েবে আমীর মোহাম্মদ আব্দুল হাকীমসহ জেলা উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও জুলাই আগস্ট আন্দোলনে আহত একজন পোষাক কর্মী মুকুল কুমার দত্ত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
জামায়াত সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন,আমরা একটি কালো যুগ পার করেছি বিগত ১৮টি বছর। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর পল্টনে প্রকাশ্য দিবালোকে খুনি সন্ত্রাসী ফ্যাসিস্ট সমস্ত গুম, হত্যাকাণ্ড, রিমান্ড, ক্রসফায়ারের মাস্টার মাইন্ড শেখ হাসিনার নির্দেশে পল্টনে লগি বৈঠা দিয়ে আমাদের সাতজন তরুণ নেতাকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের মৃতদেহের উপর উঠে ঘৃণ্য উল্লাস করেছিল। আমরা সেই ইতিহাস ছবি ভুলে যাইনি।
তিনি বলেন, বিগত ফেসিস্ট আমলে অর্থনীতিতে চলেছিল লুটপাট, জুডিশিয়ারি বিচার অঙ্গনে কোন ন্যায় বিচার ছিল না, শাসন ক্ষমতা এই শেখ পরিবার হাসিনার পরিবার এবং আওয়ামী পরিবার সিন্ডিকেট করে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু তছনছ করে দিয়েছিল। কত মানুষ শহীদ হয়েছে, কত মানুষ আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ কারা বরণ করেছে। কত শিশু, কত বৃদ্ধ কত মা আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে কান্না করেছে। অত্যাচারী শাসকের হাত থেকে এ জনপদকে রক্ষা করার জন্য দোয়া করেছে। আমরা জানি না কোন শহীদ বা কার হাতকে আল্লাহ কবুল করেছেন ।গত ৫ই আগস্ট আসমান থেকে আল্লাহর রহমতের ধারা বর্ষিত হয়েছে।
তিনি আওয়ামী লীগ আমলে জামাত নেতা কর্মীদের উপর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের বহু নেতা কর্মীদেরকে গ্রেফতার করে বৃদ্ধ বয়সে কারাগারে নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে, তাদেরকে ফঁাসি দিয়েছে। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা বাদী, মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা ট্রাইব্যুনাল, মিথ্যা বিচারক, সাজানো রায় দিয়ে ইতিহাসের বর্বরতম জুডিশিয়াল কিলিং করে আমাদের নেতাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। বিদেশ থেকে রায় লিখে দেয়া হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে শেখ হাসিনা। তিনি এখন ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন। সেখান থেকেও তিনি ষড়যন্ত্র করছেন। একজন আন্তর্জাতিক খুনি ও সব খুনের মাস্টারমাইন্ড কে সেখানে ভারত আশ্রয় দিয়ে জেনেভা কনভেনশন এবং সকল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। তাহলে আমরা এটা বলতে বাধ্য, এত বছরের জুলুম নির্যাতন,লুটপাট খুনের পিছনে তাদেরও হাত ছিল। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য ।তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, যে ট্রাইব্যুনাল দিয়েছিল আলেমদেরকে ফঁাসি দেওয়ার জন্য, আল্লাহর কি বিচার এখন সেই ট্রাইব্যুনালেই তার বিচারের আয়োজন চলছে। ২ শর উপর মামলা হয়ে গেছে ট্রাইবুনালে। রেড এলার্ট জারি হয়েছে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে।
জুলাই বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আন্দোলনে ২ হাজার ছাত্র জনতা জীবন দিয়েছে, ৪০ হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। এই যে ত্যাগ, এই যে আত্মদান রক্তদান, যারা চলে গেল তারা তো বিজয় দেখে যেতে পারল না। তাদের স্ত্রী সন্তান শিশুরা কঁাদে, আহতরা হাসপাতালে, বিজয় এই মুক্তির স্বাদ তারা দেখতে পারছে না। যারা আত্মত্যাগ করে গেল তাদের রক্তের এই ঋণ এই ত্যাগ আমাদের শোধ করতে হবে। আমরা সবাই তাদের রক্তের কাছে ঋণী আছি। তা শোধ করার একটাই উপায় তা হচ্ছে, তারা যে ইনসাফপূর্ণ একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য রক্ত দিয়েছিল সেই স্বাধীন, সোনার, সমৃদ্ধ, নিরাপদ, কল্যাণ রাষ্ট্রের বাংলাদেশ আমাদের গড়তে হবে। তাহলে এই শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করা যাবে। একটি অবাধ নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা এই নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। কিন্তু সেখানেও অন্তরায়। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার ঐক্যের চেতনা ছিল, কোন ষড়যন্ত্র কোন লোভ নতুন করে এই অগ্রযাত্রাকে মাঝে মাঝে যেন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, চাঁঁদাবজীর মোত সামাজিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গলেও এখন সমস্য হয়। আমরাতো কনো দলের নাম করে তার বিরুদ্ধে কথা বলছিনা। গাজীপুরের অনেক মিলকারখানার মালিকরাও বলেছেন চাঁদাবাজির কারনে ব্যবসা করা যাচ্ছে না। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গাজীপুরের প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, চাঁদাবাজ ,মাস্তান যে দলেরই হোক , যারা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বাঁধাগ্রস্থ করবে । তাদেরকে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আমরা বুঝবো প্রশাসনও ওই সব মাস্তান ও চাঁঁদাবাজদের দোষর ।