নারায়ণগঞ্জে অবৈধ বালু উত্তোলনে পাল্টে যাচ্ছে নদীর গতিপথ, বিলীন হচ্ছে মাছ
নারায়ণগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলো থেকে অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী মহল। এতে নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি গতিপথ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে চরম বিপর্যয় ঘটছে নদীগুলোর। বিলীন হচ্ছে নদীর মিঠা পানির মাছও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে এই অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যবসা। তবে নদী রক্ষায় এসব অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ি চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করছেন এলাকাবাসীসহ পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
তবে অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাসহ কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ।
কয়েকটি নদী ঘুরে দেখা যায়, নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এতে নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে নদীগুলো। নারায়ণগঞ্জে মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে চলাচলের সময় চোখে পড়ে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের এমন দৃশ্য।
এলাকাবাসির অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্থানীয় প্রভাবশালি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে এভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। কিছুদিন আগেও দিনে দুপুরে বালু উত্তোলন করা হতো।
তবে এখন যৌথ বাহিনীর নজর এড়াতে রাতের আঁধারে সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় এই অপকর্ম চলছে। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নদীর গতিপথ ও ভারসাম্য। বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীর পুরনো ঐতিহ্য সহ সব ধরণের সুস্বাদু মাছ। ঝুঁকির মুখে পড়েছে ইলিশের প্রজননও।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, নদীর পুলিশ বা প্রশাসন এখানে আসেও না, কোন খবরও রাখে না। আমরা এলাকার মানুষ পড়েছি বিপদে। এদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করতে গেলে মারধর করে অস্ত্র দেখিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। তাই এসব সন্ত্রাসিদে ভয়ে এলাকার মানুষ কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না।
নদী রক্ষার জন্য অবৈধ বালু উত্তোলনকারিদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছেন বিভিন্ন পরিবেশবাদি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মো. হোসাইন বলেন, বছরের পর বছর অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আমাদের নদীগুলোকে গ্রাস করে ফেলছে। নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। ইলিশের প্রজননও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের দাবি যে কোন উপায়ে নদী গুলোকে রক্ষা করা হউক। অবৈধ বালু ব্যবসায়ী চক্রকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক। তা না হলে নদী রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
এদিকে, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে নজরদারি চলছে দাবি করে নৌ-পুলিশকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনার কথা জানান বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মোবারক হোসেন মজুমদার।
তিনি বলেন, নৌ পুলিশ কিন্তু নিয়মিত নদীতে নজরদারি করছে। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি। দিনের বেলায় অভিযান চলাকালে এইসব অবৈধ ড্রেজার আমাদের চোখে পড়ে না।
যেহেতু গভীর রাতে বা ভোরবেলায় বালু উত্তোলন করছে, আমরা অচিরেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। নৌপুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করে এগুলো উচ্ছেদের চেষ্টা করব
বিআইডব্লিউটিএ’র এই কর্মকর্তা আরও জানান, নারায়ণগঞ্জে গত এক বছরে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নদী থেকে অর্ধশতাধিক অবৈধ ড্রেজার উচ্ছেদ করা হয়েছে।