ইতিহাস ও সংস্কৃতি

ঘুরে আসুন নারায়ণগঞ্জের ৬ মনোমুগ্ধকর স্থান

ইট-পাথরের নগরীতে ব্যস্ততার ভিড়ে একটু ছুটি মিললেই ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা সবারই থাকে। যানজট এড়িয়ে কম দূরত্বে যদি কোথাও যাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। একদিনের ছুটিতে সুন্দর সময় কাটাতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন রাজধানী লাগোয়া নারায়ণগঞ্জের ৬টি দর্শনীয় স্থানে। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর প্রাকৃতিক শোভার এক অনন্য মিশেল ছড়িয়ে আছে পুরো জেলায়।

 

চলুন জেনে নিই নারায়ণগঞ্জের যেসব জায়গায় ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে।পানাম নগরী

পানাম নগরী

বীর ঈশা খাঁর সময়কালে বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ের পানাম নগরী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। সে সময় সোনারগাঁয়ের রাজকার্য পরিচালিত হতো এ নগরী থেকে। বর্তমানে যে পানাম দাঁড়িয়ে আছে তার অবকাঠামো ব্রিটিশ আমলের। প্রাচীন পানাম চাপা পড়ে আছে আধুনিক পানামের নিচে। সেকালে এখানে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য অট্টালিকা, মসজিদ, মন্দির, মঠ, ঠাকুরঘর, গোসলখানা, নাচঘর, খাজাঞ্চিখানা, টাকশাল, দরবার কক্ষ, প্রশস্ত দেয়াল, ভোজনালয়, বিচারালয়, প্রমোদকুঞ্জ ইত্যাদি।

পানাম নগরীতে দেখা যায় ৪০০ বছরের পুরনো মঠবাড়ি। এর পশ্চিমে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য কুঠি ‘নীলকুঠি’ রয়েছে। আছে পোদ্দার বাড়ি, কাশিনাথের বাড়ি, সোনারগাঁয়ের একমাত্র আর্ট গ্যালারিসহ নানা প্রাচীন ভবন।
পানামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পঙ্খীরাজ খাল। শের শাহ’র আমলে নির্মিত সোনারগাঁ থেকে সিন্ধু পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মাইলের ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড-ট্রাংক রোডের কিছু অস্তিত্ব আজও পানামে দেখা যায়।
লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে মাত্র আধা কিলোমিটারের মতো দূরত্বে গোয়ালদী গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক পানাম নগর। এর পাশেই পানাম পুল। যারা সোনারগাঁ জাদুঘর দেখতে যান, একবারের জন্য হলেও তারা ঢুঁ মারেন এ নগরীতে।

সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর

রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার পূর্বদিকে সোনারগাঁও। আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকশিল্পকে ধরে রাখতে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।

এখানে রয়েছে সরদার বাড়ি, জয়নুল আবেদিনের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ভাস্কর্য, জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্য, জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর, লোকজ মঞ্চ, কারুশিল্প গ্রাম। এছাড়াও জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারিগুলোতে কাঠে বিভিন্ন কারুশিল্প, পটচিত্র, মুখোশ, আদিম জীবনভিত্তিক নিদর্শন, লোকজ বাদ্যযন্ত্র, পোড়ামাটির ফলক, লোকজ অলংকারসহ প্রাচীন নিদর্শন দেখা যায়।

পানাম নগর থেকে সোনারগাঁওয়ের দূরত্ব খুব বেশি না। ২০ থেকে ৩০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় অটোরিকশায় খুব সহজেই এখানে আসা যায়।

পিরামিড

সুদূর মিশরে গিয়ে পিরামিড দেখার সৌভাগ্য কজনের হয়? কিন্তু নারায়ণগঞ্জেই তাজমহলের কাছেই মিশরের পিরামিডের প্রতিরূপ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে গেলে দর্শনার্থীরা একইসঙ্গে পৃথিবীর দুটি বিখ্যাত স্থানের আবহ কিছুটা হলেও পাবেন।

তবে এখানকার পিরামিডে আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য, ২৫০ আসন বিশিষ্ট সিনেমা হল ও সেমিনার কক্ষ।

এছাড়াও আসল পিরামিডের স্বাদ দিতে ভেতরে রাখা হয়েছে মমির প্রতিরূপ, রাজা-রাণীদের অলংকার, পোশাক, আসবাবপত্রের প্রতিরূপ।

তাজমহল বা পিরামিড যেতে হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে কুমিল্লা বা সোনারগাঁগামী বাসে চড়ে প্রথমে মদনপুর বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় সহজেই তাজমহল ও পিরামিড দেখতে যাওয়া যায়।

এছাড়া রাজধানীর কুড়িলের ৩০০ ফিট রাস্তা দিয়ে ভুলতা গিয়ে, সেখান থেকে অটোরিকশা বা সিএনজিতেও তাজমহল যাওয়া যেতে পারে।

বাংলার তাজমহল

দিল্লির তাজমহল দেখার সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই, পরিস্থিতি এমন হলে বাংলার তাজমহল দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারে। আগ্রার তাজমহলের প্রতিরূপে সোনারগাঁও উপজেলার পেরাব গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে বাংলার তাজমহল বা দ্বিতীয় তাজমহল।

২০০৮ সালে সোনারগাঁয়ে আগ্রার তাজমহলের আদলে নির্মিত হয় ‘বাংলার তাজমহল’। বিভিন্ন স্থানে বসানো টাইলস, বিদেশি ডায়মন্ড পাথর, গম্বুজের ওপরে ব্রোঞ্জের তৈরি চাঁদ-তারায় দৃষ্টিনন্দন এ তাজমহল।

চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক আহসানউল্লা মনি নিজস্ব অর্থায়নে পেরাব গ্রামে নিজ বাড়িতে ১২ বিঘা জমির ওপর এ তাজমহল নির্মাণ করেন। এতে ব্যবহৃত টাইলসগুলো আনা হয়েছে ইতালি থেকে। স্থাপনাটির বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে ১৭২টি বিদেশি ডায়মন্ড পাথর। এছাড়া গম্বুজের ওপর চাঁদ-তারা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে ৪ মণ ব্রোঞ্জ।

আগ্রার তাজমহলের মতোই ভবনের সামনে আছে পানির ফোয়ারা, ফুলের বাগান এবং দর্শনার্থীদের বসার স্থান, মূল ভবনের ৪ কোণে নির্মিত হয়েছে ৪টি বড় মিনার।

মায়াদ্বীপ

মেঘনা নদীর বুকে এক টুকরো সবুজ হয়ে জেগে উঠেছে মায়াদ্বীপ। ত্রিভুজাকৃতির এই চরটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়নে অবস্থিত।

আকারে কিছুটা ছোট হলেও খোলা প্রান্তরের মাঝে নদীর কলকল ধ্বনি আর মন শীতল করা ঠান্ডা বাতাস মনকে ভরিয়ে দেবে অকৃত্রিম আনন্দে।

এখানে যেতে হলেও আগের মতো মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে অটোরিকশা নিয়ে যেতে হবে বারদী বৈদ্যেরবাজারে। তারপর সেখান থেকে মেঘনা নদীর ঘাটে।

ঘাট থেকে সারাদিন চুক্তিতে নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে মায়াদ্বীপে ঘুরতে যাওয়া যাবে। গাড়িতে করেও সেখানে পৌঁছানো যায়। মায়াদ্বীপ পৌঁছাতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগতে পারে।

জিন্দা পার্ক

মানুষের কোলাহল আর কর্মব্যস্ততা থেকে দূরে থাকতে পূর্বাচলের কাছে জিন্দা পার্ক সময় কাটানোর একটি সহজ গন্তব্য হতে পারে। রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই পার্কটি প্রায় ১৫০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। পার্কটিতে রয়েছে একটি কমিউনিটি স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক, নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি, মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, একটি রেস্তোরাঁ।

এ পার্কে আছে ২৫০ প্রজাতির ১০ হাজারেরও বেশী গাছ। পার্কের পরিবেশ কলকাকলিতে মুখর করে রেখেছে অসংখ্য পাখি। ৫টি সুবিশাল লেকে গরমের দিনেও শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে।
পরিবারের সবাইকে নিয়ে বনভোজনের জন্য জিন্দা পার্ক বিশেষভাবে পরিচিত। কাঠের ব্রিজ পেরিয়ে দিঘির মাঝখানে তৈরি বাঁশের চা ঘরে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে এক কাপ চা কিংবা পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকার জন্য অসাধারণ এ পার্কটি।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button