কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন নিয়ম না মেনে ভর্তি পরীক্ষার আয় থেকে ১০ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
এছাড়াও আগের উপাচার্যের বিভিন্ন কার্যক্রমের কৃতিত্ব মিথ্যাচারের মাধ্যমে নিজে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা৷
রবিবার (২৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত এক ‘মিথ্যা’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মাহমুদুল হাছান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন মন্তব্য করেন তারা৷
বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, গত ১৯ মার্চ সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। ভর্তি পরীক্ষার আয় থেকে ‘ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘ভাইস চ্যান্সেলর বৃত্তি’ প্রবর্তন করার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে সেখানে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। এছাড়াও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আয় থেকে ৪ লক্ষ এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৬ লক্ষ নিয়েছেন। অ্যাওয়ার্ড দিতে গিয়ে শিক্ষকদের টাকা কমিয়ে দিলেও অন্যান্য সময়ের চাইতে উপাচার্য শিক্ষকদের চেয়ে প্রায় ৮/১০ গুণ বেশি অর্থ নিচ্ছেন। এছাড়াও সেশনজট কমে আসার যে কৃতিত্ব উপাচার্য নিচ্ছেন তা বিগত উপাচার্য মহোদয়দের সময় থেকেই নেয়া হয়েছে এবং সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
যার পুরো কৃতিত্ব শিক্ষক শিক্ষার্থীদের। তবে তিনি বিভাগগুলোতে ন্যূনতম সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। প্রতিটি বিভাগে ৬-৭ জন শিক্ষক দিয়ে চললেও গত দুই বছরে তিনি মাত্র ৭ জন শিক্ষকের পদ এনেছেন। অথচ আগের উপাচার্য যোগদানের মাত্র ৬ মাসে ৬৬ জন শিক্ষকের পদ এনেছিলেন।
তারা আরও বলেন, যে সকল সেবা (যেমন, ডি-নথি, ওয়েবসাইট, অ্যাপ, ইআরপি, ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক ইত্যাদি) প্রদানের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোর বরাদ্দই গত উপাচার্যের সময়ে অনুমোদনপ্রাপ্ত। বর্তমান উপাচার্য এসকল ক্ষেত্রে নতুন কোনও বরাদ্দ আনতে পারেননি। আর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় তিনি সীমাহীন অনিয়ম করে চলেছেন। প্রায় প্রত্যেকটি টেন্ডারে নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিনি ৩য় কিংবা ৪র্থ সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দিয়ে থাকেন এবং দরদাতা কোম্পানিগুলোর সাথে উপাচার্য ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেন। প্রাক্তন উপাচার্য যোগদানের দশ মাসের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১৬৫৫ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প এনেছেন এবং কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ভৌত ও অবকাঠামোগত কাজসমূহ সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশের উন্নয়নের গর্বিত অংশীদার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অর্পণ করেছেন। শুধু তাই নয়, বিগত ১৬ বছরে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য তিনি ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করেন। সুপরিসর দৃষ্টিনন্দন মেইন গেইট ও কংক্রিটের রাস্তা, রাস্তার দুপাশে দৃষ্টিনন্দন ফুলের গাছ, গোলচত্বর, মুক্তমঞ্চ, মেইন গেইট থেকে শহিদ মিনার পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন রাস্তা সবই পূর্বের উপাচার্যের আমলের। বিভিন্ন স্থাপনার উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, শেখ হাসিনা হল, বঙ্গবন্ধু হলের এক্সটেনশন সবই ভূতপূর্ব উপাচার্যের আমলে শুরু হওয়া কাজ। উল্লেখ্য, ক্রীড়া কমপ্লেক্সের কাজের বরাদ্দও আগের উপাচার্যের আমলের। উন্নয়নমূলক যে-সকল কাজ বর্তমানে চলছে সেগুলোর প্রায় সবই আগের উপাচার্যের আমলের বরাদ্দ থেকে। শুধু মিথ্যাচারের মাধ্যমে তিনি এসবের কৃতিত্ব নিচ্ছেন। ইতঃপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল সম্মানিত উপাচার্য মহোদয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিভিন্ন অঙ্কের উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ এনেছেন। শিক্ষক সমিতি প্রশ্ন রাখতে চায় বর্তমান উপাচার্য তাঁর দুই বছরের মেয়াদে নতুন কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ আনতে পেরেছেন কি না?
“শিক্ষক সমিতি মনে করে উপাচার্যের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও আইন বহির্ভূত কার্যক্রমের মাধ্যমে গত দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে যে পরিমাণ নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছে, এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ তলানীতে গিয়ে পৌঁছেছে। বলা হয়েছে বৈশ্বিক AD ইনডেক্স-এর গবেষকদের তালিকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সংখ্যা বেড়েছে; বৃদ্ধি পাবে এটিই স্বাভাবিক। কারণ দিনে দিনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন, শিক্ষকদের উন্নতমানের পাবলিকেশন হচ্ছে, সাইটেশন সংখ্যা বাড়ছে, তাই AD ইনডেক্স তালিকায় তাদের স্থান হচ্ছে। এতে মাননীয় উপাচার্যের কোন কৃতিত্ব নেই। পক্ষান্তরে তিনি গবেষণা খাতে ন্যূনতম কোনো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারেননি।” তারা যোগ করেন।
তারা বলেন, গেস্টহাউস নিয়ে উপাচার্য প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছেন। আগে একজন পূর্ণকালীন কেয়ারটেকার গেস্টহাউজে ছিল, তাকে সরিয়ে দিয়ে এখন পর্যন্ত গেস্টহাউজে স্থায়ী কোন কর্মচারী নিয়োজিত করেননি। আমরা জানতে পেরেছি স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে একজনকে নিয়োগ দিয়েছের। এতে গেস্টহাউজের নিরাপত্তা নিয়ে শিক্ষক সমিতি সংশয় প্রকাশ করছে। প্রতিনিয়ত আইন অমান্য করে ডিন ও বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এসব নিয়ে বারংবার উপাচার্যকে বললেও তিনি এগুলোর তোয়াক্কা করছেন না। ডিন নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ডিন নিয়োগ দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ২০ মার্চ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তিনি পদার্থবিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি এই তিনটি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দিয়েছেন।