সোনারগাঁয়ে অপসাংবাদিকদের দৌরাত্ন্য; অতিষ্ঠ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বলা হয়, সাংবাদিকরা সমাজের আয়না। মহৎ ও সেবামূলক পেশা হিসাবে সমাজে বেশি প্রচলিত রয়েছে সাংবাদিকদের নাম। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের সম্মান নিয়ে পেশাটি এখনো সগৌরবে রয়েছে। কিন্তু এই সেবামূলক পেশাটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে কিছু অপসাংবাদিকদের কর্মকাণ্ড।
সাংবাদিকের লেখনির মাধ্যমেই সমাজের নানা অন্যায় অসঙ্গতি উঠে আসে। সেই আলোকে প্রশাসন সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নেয়। মানুষ তার প্রতিকার পায়। সমাজ ও মানবতার সেবায় সাংবাদিকদের ভুমিকা অনন্য। এজন্য প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও সাংবাদিকদের সমীহ করেন। কিন্তু এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এই মহৎ পেশায় ঢুকে পড়ছে কিছু দুষ্কৃতিকারী অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত অসাধু ও লোভী ব্যক্তি।
সোনারগাঁ উপজেলায় সরেজমিনে দেখাযায়, প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকদের পাশ কাটিয়ে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সমাজের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। সাংবাদিকতার নামে তারা নেতাদের চাটুকারীতা, জনপ্রতিনিধিদের প্রচার যন্ত্রে পরিনত হয়, হয় পুলিশের সোর্স, কেউবা আবার মাদকের সাথেও জড়ান, আবার সাধারণ মানুষকে নিউজ করার নামে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অর্থ আদায় করে থাকে তারা। প্রভাবশালীদের সাথে চুক্তিভিত্তিক নিউজের নামে অসত্য ঘটনা বানিয়ে অন্যের চরিত্র হনন করে।এছাড়াও সোনারগাঁয়ের একাধিক জনপ্রতিনিধি জানায় সাংবাদিকদের জ্বালায় আমি অতিষ্ঠ, কোন সভা-সমাবেশ করলেই বিপদ, দাওয়াত ছাড়াই তারা দলে দলে আসে আর নিউজের নামে আমাকে লুট করে নিয়ে যায়। এতে একদিকে যেমন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও আতঙ্কিত হচ্ছে, অন্যদিকে মহান এই পেশা সম্পর্কে বিরূপ ধারনা পোষণ করছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পেশাদার সাংবাদিকরা।
এরা কখনো নিজেরা প্রশাসনের কথা বলে, কখনো প্রকৃত সাংবাদিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে, কখনো ক্লাবের নাম ভাঙ্গিয়ে আবার কখনো সাংবাদিক হয়েও রাজনৈতিক দলের কর্মী পরিচয়ে সোনারগাঁয়ে তারা অপসাংবাদিকতার দৌরাত্ন্যকে প্রতিষ্ঠিত করছে।
কোন অখ্যাত পত্রিকা বা অনলাইন পোর্টালের আইডি কার্ড ম্যানেজ করে তারা কখনো উপকারীর বেশ ধরে কখনোবা ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে। সবকিছুর উদ্দেশ্য মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায়।
সম্প্রতি সোনারগাঁয়ের এরকম কিছু সাংবাদিকদের দৌরাত্ন্য বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। ভালো সাংবাদিকদের পাশ কাটিয়ে তারা প্রতিদিন সমাজের নানা অপরাধমুলক ঘটনা খুঁজে বেড়ান কখনো নির্দোষ ব্যক্তিদেরকেও টার্গেট করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
এমনি এক ঘটনা সোনারগাঁও পৌরসভার হাতকোপা এলাকার ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক জাহের মোল্লার বিষয়টি। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে নিয়মিত মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে যাচ্ছে। সারাক্ষণ আমাকে মোবাইল ফোনে বিরক্ত করেছে। ফোন রিসিভ না করলে আমার বাড়িতে চলে আসে, এমনকি আমর বেডরুমে ঢুকে পরে। তাদের জ্বালায় আমি অতিষ্ঠ।
জানাযায়, সোনারগাঁ পৌরসভার হাতকোপা, দৈলেরবাগ, ভট্টপুর, পিরোজপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে কয়েকজ মিলে নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেন। নয়তো ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাদের গ্যাস লাইন কেটে দেওয়ার হুমকী দেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জাহের মোল্লা বিষয়টি প্রকৃত সাংবাদিকদের জানালেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য ভুক্তভোগীরা অপসাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বলেন, আমরা এ বিষয়টি যদি আর করো সাথে বলছি তারা জানতে পারেন, তাহলে তাকে প্রতি মাসেই টাকা দিতে হবে, না দিলে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে আসবে।
উপরুক্ত ঘটনা একটা নমুনামাত্র। এরকম প্রতিদিনই সাধারণ মানুষ কতিথ এসব নামধারী সাংবাদিকের হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে এরকম আরো বহু অপকর্মের রেকর্ড রয়েছে এই প্রতিবেদকের কাছে।
সোনারগাঁ থেকে এরকম ধান্দাবাজ ও ভুঁয়া অপসাংবাদিকদের বিতারিত করতে প্রশাসন ও মুল ধারার সাংবাদিকদের ভুমিকা দেখতে চায় জনগন।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ানুল হক বলেন, এ ধরনের অপসাংবাদিকদের নাম দেন, তারপর দেখেন কি ব্যবস্থা নেই।