শহর

মেয়র আইভীর অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে দুদকে অভিযোগ

নিউজ ডেস্ক, সোনারগাঁ টাইমস২৪ ডটকম :

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়েছে। আয়কর বিবরণীতে তার নিট সম্পত্তির পরিমাণ ২৪ লাখ টাকার কম দেখানো হয়েছে। তবে বাস্তবের সঙ্গে সেটির আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর ঢাকার হাফিজুর রহমান অভিযোগটি করেন। দুদক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

দুদকে দাখিল করা অভিযোগপত্রে বলা হয়, মেয়র আইভী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে মোট অর্জিত তহবিল ১৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তার নিট সম্পদের পরিমাণ ২৩ লাখ ৭২ হাজার ২৫০ টাকা। অনুসন্ধানে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। পৈতৃক সূত্রে তিনি ১২ শতাংশ জমি পেয়েছেন এবং দলিলে ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা দাম দেখানো হয়েছে। কিন্তু এ সম্পদ আয়কর রিটার্নে তিনি দেখাননি। সম্প্রতি নির্মিত চারতলা প্রাসাদসম বাড়ি ‘চুনকা কুঠিরে’ তিনি ও তার দুই ভাই বসবাস করছেন। ভবনটি নির্মাণে প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু আইভী আয়কর দেন। তার ভাই আলী রেজা রিপনের আয়কর সনদ থাকলেও ২০২০-২০২১ করবর্ষে তিনি রিটার্ন দাখিল করেননি।

অভিযোগকারী হাফিজুর রহমান জানান, চলতি বছরের ২৪ জুন আইভীর ভাই যুবলীগ নেতা উজ্জ্বলের নেতৃত্বে এক আইনজীবীর জমি দখল করা হয়েছে। বসতবাড়িও ভাঙচুর করা হয়। ২০১১ সালে টেন্ডার হওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি (পৌর পাঠাগার) পাঠাগারটির ব্যয় দুর্নীতি করে তিন কোটি টাকা থেকে ২৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। ১৮ বছরে উন্নয়ন কাজের প্রায় ৮০ ভাগ টেন্ডার রত্না ও মুনিয়া নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হয়েছে।

হাফিজুর রহমান আরও জানান, নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বারবার নিষেধ সত্ত্বেও মেয়র আইভী একক সিদ্ধান্তে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় কয়েক কিলোমিটার বিস্তৃত খালের সৌন্দর্য বর্ধনের নামে প্রায় ১৬০ কোটি টাকার প্রকল্প করছেন। সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ না করতে সওজ বারবার অনুরোধ করলেও মেয়র আইভী কর্ণপাত করেননি।

মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে অভিযোগ- নগরীর জিমখানা এলাকার ৫৩৯ বছরের পুরাতন মুঘল আমলের মসজিদ ও ওয়াকফ করা প্রায় ৩০ কোটি টাকার সম্পত্তি তিনি দখল করেছেন। মডেল মসজিদের জন্য দেওয়া ওয়াকফ সম্পত্তি দখলে নিতে তিনি উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও মানেননি। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মসজিদ কমিটি মামলা করেছে।

এ ছাড়া মেয়র আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ করা হয়েছে। নগরীর দেওভোগ এলাকার কয়েকশ বছরের পুরোনো মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি নিজেদের বলে দাবি করেন আইভীর পরিবার। এর প্রতিবাদে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ব্যানারও টানিয়েছেন। হিন্দু নেতাদের দাবি, দেবোত্তর সম্পত্তি কেনা-বেচার কোনো আইন না থাকলেও কেনার অজুহাতে বিশাল সম্পত্তি গ্রাস করেছে আইভীর পরিবার।

আইভীর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ-২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর শহরের জিমখানা এলাকার ৭০ বছরের পুরোনো রেলওয়ের ৩৫টি স্টাফ কোয়ার্টার গুঁড়িয়ে দিয়ে সিটি করপোরেশনের ১৬ একর জায়গা দখল করা হয়েছে। রেলওয়ের জমির দখলদারিত্ব বজায় রাখতে সেটিকে শেখ রাসেল পার্ক নাম দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মামলা করলে গ্রেফতার ঠিকাদারকে ছাড়িয়ে আনতে সারারাত থানায় বসেছিলেন মেয়র আইভী।

অভিযোগে বলা হয়েছে-আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২০১৯ সালের ২০ জুন শতবর্ষী রহমতউল্লাহ মুসলিম ইনস্টিটিউট ভবন ভেঙে দিয়েছেন মেয়র আইভী। অথচ ওই ইনস্টিটিউটের সভাপতি জেলা প্রশাসক। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভবনটি ভেঙে ফেলায় ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট আইভীকে শোকজ করেন নারায়ণগঞ্জের চতুর্থ সহকারী জজ আদালতের হাকিম। নোটিশ ছাড়াই ভবনটি ভেঙে ফেলায় প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী পথে পথে ঘুরছেন। আইভীর বিরুদ্ধে তারা ৩১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের মামলাও করেছেন।

Related Articles

Back to top button