নারায়ণগঞ্জ সিটিতে মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন তৈমূর আলম খন্দকার
নিজস্ব সংবাদদাতা, সোনারগাঁ টাইমস২৪ ডটকম :
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বিএনপি নেতা এড. তৈমূর আলম খন্দকার। প্রার্থী হবেন কি, হবেন না আগামী দু’এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিবেন এই নেতা।
এমন তথ্য জানিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমূর আলম নিজেই। তবে, বিএনপি থেকে নয়, নির্বাচনে অংশ নিবেন নাগরিক কমিটির প্রার্থী হয়ে।
তৈমূর আলম খন্দকার লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, গত ১৮ বছরে এই নগরী ডাস্টবিনের নগরীতে পরিনত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জবাসী কিছুই পায়নি। তাই এই নারায়ণগঞ্জবাসীর দাবি রয়েছে, আমাকে প্রার্থীতা করার। যেহেতু বিএনপি করি এবং দল নির্বাচনে অংশ নিবে না। তাই দলের নীতিনির্ধারক ও নগরবাসীর সাথে আলোচনা করে ২-১ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিবো, নির্বাচন করবো কি না।
আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বারের মধ্যে নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্র কিনতে হবে এই বিএনপি নেতাকে। এরই মধ্যে মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে অংশ নিচ্ছেন নৌকার প্রার্থী মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। অন্যান্য দল থেকেও আরও ৫ জন মনোনয়ন কিনেছেন।
কে এই তৈমূর আলম খন্দকার?
ইস্ট পাকিস্তান গ্রীন্ডলেজ ব্যাংকের ম্যানেজার বাবা শাহআলম খন্দকার ও মা রোকেয়া খন্দকার দম্পতির ঘরে ১৯৫৩ সালের ১৯ অক্টোবর জন্ম নেন তৈমূর আলম খন্দকার। ভাই বোনদের মধ্যে তৈমুর আলম খন্দকার সবার বড় ছেলে। শহরের গলাচিপা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রূপসী খন্দকার বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন প্রাইমারী পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু সড়কে গ্রীন্ডলেজ ব্যাংক এলাকাতেই প্রথমে তারা বসবাস করতেন। পরে শাহআলম খন্দকার শহরের মাসদাইরে জায়গা কিনে সেখানে বসবাস শুরু করেন। নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ফাস্ট ক্লাস পান তৈমুর। ৬৯ সালে তোলারাম কলেজে ডিগ্রীতে ভর্তি হয়। এ কলেজে পড়াশোনা কালে সংগঠক হিসেবে নিজেকে জাহির করেন। মাসদাইরে প্রভাতী কল্যাণ সংস্থা, মুসলিম একাডেমী করার পাশাপাশি দিনমজুরদের বিভিন্ন সংগঠনও শুরু করেন। ঠেলাগাড়ি, ভ্যান গাড়ি, রিকশা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ শুরু করেন তৈমুর। ১৯৭৪ সালে ডিগ্রী পরীক্ষায় সেকেন্ড ক্লাস পায়। পরে তৈমুর নারায়ণগঞ্জ ল কলেজ থেকে ৭৬ সালে ল পাশ করে ৭৮ সালে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতিতে সম্পৃক্ত হন।
১৯৯৭ সালে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে ঢাকায় থেকে হাইকোর্টে আইন পেশা চালিয়ে যান তিনি। ওই সময়ে একটি রাজনৈতিক মামলায় হাইকোট থেকে গ্রেপ্তার হয়ে রাজনীতিতে আলোচনায় ওঠে আসেন। ২০০১ সালের ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা ঘটনায় তৈমুর আলমকে আসামী করা হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামাত জোট সরকার তৈমুর আলম খন্দকারকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান বানায়। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী তৈমুর আলমের ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার আতাতীয়দের হাতে খুন হয়। সাব্বির আলম হত্যার ঘটনায় তৈমুর আলম বাদী হয়ে বিএনপি দলীয় এমপি সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছাত্রদল ক্যাডার জাকির খানসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এরপর তৈমুর আলমের সঙ্গে গিয়াস উদ্দিনের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। ২০০৩ সালে তৈমুরকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করা হয়। বিআরটিসির চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তৈমুর আলমের ক্ষমতা কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। ২০০৭ সালে ওয়ান এলেভেনের পর বিএনপির বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হলে প্রথমবারের মত তার আইনজীবী হিসেবে আইনী লড়াই চালিয়েযান তৈমুর। পরে ওই বছরের ১৮ এপ্রিল যৌথবাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে ৮টি মামলা করে যার মধ্যে একটি মামলায় ১২ বছরের জেল হয়। ২০০৯ সালের মে মাসে মুক্তি পান তৈমুর। ওই বছরের জুন মাসে তৈমুরকে আহবায়ক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। বছরের শেষের দিকে ২৫ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে তৈমুর হন জেলা বিএনপির সভাপতি। একই সঙ্গে তাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা ১৮দলীয় ঐক্য জোটের আহবায়ক করা হয়। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন তৈমুর। বিএনপি প্রথম দিকে তাকে সমর্থন দিলেও ভোটের মাত্র ৭ ঘণ্টা আগে দলীয় চেয়ারপারসনের নির্দেশে তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসেন।
বর্তমানে তৈমূর আলম বিএনপির চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।