সংবাদ মাধ্যম

ছাত্রলীগের ব্যবহারে ব্যথিত আ’লীগ নেতা গাজী মুজিবুরের সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক :


সম্মানিত সাংবাদিক ভাইয়েরা
আসসালামু আলাইকুম

আমি গাজী মুজিবুর রহমান সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি, কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি ও সোনারগাঁ পৌরসভার মেয়রপ্রার্থী। আমার পিতা মরহুম গাজী আকরাম আলী হাজী ১৯৬৬ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত সাবেক আমিনপুর ও বর্তমান সোনারগাঁ পৌরসভা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি হিসেবে নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আজ আমি একটি মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আপনাদের সামনে বসেছি। আপনারা জানেন একটি নির্বাচনী বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গত বুধবার আমার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানার একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং গতকাল উপজেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সে মানববন্ধনে আমাকে নিয়ে নানা অশালীন বক্তব্য সহ ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

আমি আমার বক্তব্যের বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে চাই।

সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সাগর অভিযোগে লিখেছে আমি এমপি মহোদয়ের বিরুদ্ধে মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু অভিযোগে তার কোন উল্লেখ নাই। আর থাকবেই বা কিভাবে আমি আমার বক্তব্যে আব্দুল্লাহ্ আল কায়সার হাসনাত এমপিকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করেই বক্তব্য দিয়েছি।

আমি এমপি মহোদয়,অভিযোগকারি সাগর সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সোনারগাঁয়ের সুশীল সমাজ, পৌরবাসী, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিক ভাইদের সবিনয় অনুরোধ করব আপনারা আমার বক্তব্যটি মনোযোগ সহকারে একবার শুনুন। আমি কোথাও মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ কথা বলেছি কিনা।

বক্তব্যের শুরুতে বলেছি নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিগত সংসদ নির্বাচনেও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা কায়সার হাসনাতকে এমপিকে নির্বাচিত করেছি। বলেছি, কালাম নির্বাচিত হলে জনগনের কোন সমস্যা নেই, সমস্যা নেতাদের। বলেছি ভোটের বেপারি হয়েন না, ভোটের বেপারি হয়ে সুবিধা করতে পারবেন না। জনগণ কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না।

এটা তো আমি এমপি মহোদয়কে উদ্দেশ্য করে বলিনি। যারা গ্রামে ভোটের বেপারি সেজে প্রার্থীদের কাছে ভোট বিক্রি করতে আসে তাদের উদ্যেশ্যে। বক্তব্যে আমি স্পষ্ট করে বলেছি, আমি মনে করি, আমার প্রিয় নেতা আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ্ আল কায়সার হাসনাত মাননীয় এমপি মহোদয়ের সাথে সমন্বয় করে মাহফুজুর রহমান কালাম যদি ঘোড়া প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় তাহলে স্মার্ট সোনারগাঁ গড়ার লক্ষ্য আরো এগিয়ে যাবে।

বক্তব্যের লাইভ ভিডিও বিভিন্ন ফেসবুক আইডিতে আছে। আমি মনে করি যারা এমপি মহোদয়কে মাইনাস করে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছিল তারা নতুন কোন ষড়যন্ত্র সফল করতে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি এটা শুধু আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নয় এটা এমপি মহোদয়কে ত্যাগী ও দুঃসময়ের পরিক্ষীত নেতৃত্ব শূন্য করার কুটকৌশলের অংশ মাত্র।

ভবিষতে যাতে বলতে পারে হাসনাত পরিবারের জন্য রক্ত ও ঘাম ঝড়ানো ত্যাগী নেতা গাজী মুজিবুর রহমান কি পেয়েছে, কি পেয়ছে রফিকুল ইসলাম নান্নু, মাহফুজুর রহমান কালাম সহ নিরবে কান্নারত ত্যাগী নেতাকর্মীরা । এ উদাহরন তৈরি করেছে চক্রান্তকারীরা। আমি বিশ্বাস করি, গতকালের ঘটনায় ত্যাগী ও আদর্শবান নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষের বুকে রক্তক্ষরণ হয়েছে।

এমন হলে নতুন প্রজন্ম ত্যাগের রাজনীতিকে ঘৃনা করবে। আমি গতকাল যেখানেই গিয়েছি সাধারন জনগণ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদেছে। বলেছে গাজী ভাই আমাদের রাজনীতির ভবিষৎ কি বলে যান? আমি শুধু তাকিয়ে থেকেছি। আমি কাঁদতে পারিনি। আমি কাঁদব কিভাবে আমারতো রক্তক্ষরন হচ্ছে। সোনারগাঁ উপজেলা ও পৌরবাসী দেখেছে বিগত ১০ বছরে জাতীয় পার্টির সুবিধাভোগীরাই আজ আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারক। তারা অর্থের কারিশমা জানে। আপনারা জানেন ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য নিবিয়ে দেওয়ার আগে নবাবকে ভুল বুঝিয়ে নবাবের বিশ্বস্ত সেনাপতিতের কৌশলে সরিয়ে দিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল সুবিধাভোগী মীরজাফর ও ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানী। ১৯৭১ এ দেশ বিরোধীরা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতেছিল, মোস্তাক বাহিনী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার আগে পরিকল্পিতভাবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে বিস্বস্ত ও চৌকশ সেনাদের সরিয়ে নিয়েছিল। সে বাহিনীরই দোষরদের চক্রান্তের শিকার আমি সহ হাসনাত পরিবার ও এ পরিবারের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতারা। আমি দুঃসময়ের বৈরি পরিবেশে জীবনবাজি রেখে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেছি। সুসময়ে এসি রুমে বসে রাজনীতি করতে আসিনি। আমি জানি প্রতিকুল পরিবেশে কিভাবে রাজনীতি করতে হয়। গতকাল যারা মানববন্ধনে আমাকে হুমকি দামকি দিয়েছে, যারা আমার বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য দিয়েছে আমার রাজনীতির বয়সের অর্ধেক বয়সও তাদের হয়নি। আমি তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলব না কারন তাদের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে। একদিন তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে। আমার দীর্ঘদিনের রাজনীতিতে হাসনাত পরিবারের জন্য ত্যাগ শিকার করেছি গতকাল তার যর্থার্থ প্রতিদান পেয়েছি। এ বিচার আমি আল্লাহ্’র কাছে রেখে দিলাম।

আমার অপরাধ কি? উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে তারা সবাই আওয়ামীলীগের নেতা। আমি বিএনপি জামাতের নির্বাচন করছিনা। মাহফুজুর রহমান কালাম সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগে একজন পোড় খাওয়া নেতা। প্রায় ৪০ বছরের রাজনীতিতে নিঃস্ব। আমারই মতো একজন। সে রাজনীতিতে শুধু দিয়েই গেছে বিনিময়ে কি পেয়েছে। তাই আমি তাকে সমর্থন দিয়ে ঘোড়ার মার্কার বিজয় নিশ্চিন্ত করতে কাজ করছি। ২০১৫ সালে পৌর নির্বাচনে আমি যখন মনোনয়ন পাইনি সেদিন এই এমপি মহোদয়ের ডাকে সব কষ্ট ভুলে আমি নৌকার নির্বাচন করেছি। এবারও যদি নৌকা প্রতিক থাকতো তাহলে আমি নৌকার বিজয়ের নির্বাচন করতাম। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি উৎসবমুখর উপজেলা নির্বাচন চেয়েছেন এবং দলীয় প্রতিক তুলে নিয়ে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন সেজন্যই আমি মাহফুজুর রহমান কালামকে ঘোড়া মার্কায় সমর্থন দিয়েছি। এটা আমার অপরাধ?

আমি গাজী মুজিবুর রহমান, জননেতা মরহুম আবুল হাসনাত সাহেবের হাত ধরে ৪০ বছর আগে রাজনীতি শুরু করি। এ পরিবারের সাথে রাজনীতি করতে গিয়ে আমি বহুবার বিএনপি জামাতের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারে ডান্ডাবেরি পরে জেল খেটেছি।

আমি রাজনীতি করতে গিয়ে এই ৪০ বছরে আমার পৈত্রিক সম্পতি বিক্রি করতে করতে আজ নিঃস্ব হলেও আমি এ পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতার আসার পর আমার বাড়িতে হামলা হয়েছে। সে হামলায় আমার মরহুম পিতা সহ ভাইয়েরা আহত হয় এবং আমার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে। আমার বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আইনে মামলাসহ বহু মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।

২০০৮ সালে বর্তমান এমপি জননেতা আব্দুল্লাহ্ আল কায়সার হাসনাতের নির্বাচন করে বিপুল ভোটে বিজয়ী করতে সক্ষম হই। বিগত ১০ বছর জাতীয় পার্টির এমপি থাকাকালীন সময়ে ২০১৮ সালে শুধুমাত্র হাসনাত পরিবারের উপর আস্থা রেখে বর্তমান এমপি কায়সার হাসনাতের সিংহ মার্কার নির্বাচন করতে গিয়ে ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দত্তপাড়া গ্রামে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার উপর সসস্ত্র হামলা চালায়। সেদিন আমি কোনরকমে প্রানে বেচে যাই।

২০২৩-২৪ সালে নৌকাকে জয়ী করতে আমার অক্লান্ত পরিশ্রম সোনারগাঁবাসীর চোখ এড়িয়ে যাওয়ার কথা না। যাই হউক সবশেষে আমি আশা করব আমার মতো আর কোন কর্মীর জীবনে যেন এমন দিন না আসে।

সবশেষে সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করে বিগত দিনের জ্ঞাত, অজ্ঞাত সকল ভুলভ্রান্তির জন্য সকলের নিকট আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষনা করছি।

গাজী মুজিবুর রহমান
সদস্য
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ।

Related Articles

Back to top button