যৌন নিপীড়ন এবং ধর্ষণবান্ধব সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিলের দাবিতে রাজধানীতে এই শেকল ভাঙার পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই পদযাত্রায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক নারী অংশগ্রহণ করেন।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ জাদুঘরের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে সিটি কলেজ, কলাবাগান হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে শেষ হয়। গৃহ, কর্মস্থল, গণপরিবহনে নারীর জন্যে নিরাপদ বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’ নামক ওই প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সন্ধ্যা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রতে (টিএসসি) ফেস্টুন লেখা, আঁকা, রঙ করা ও মশাল তৈরির কাজ শুরু হয়।
পদযাত্রা শুরুর আগে ‘শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রা’র সংগঠক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাপ্তী তাপসী বলেন, ‘জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে শুধুমাত্র লৈঙ্গিক পরিচয় নারী হওয়ার কারণে জুলুম, অত্যাচার, বৈষম্য সহ্য করতে হয় প্রতিনিয়ত। নিপীড়নের বিচার চাইতে গেলে যেখানে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট খুলে দেখাতে বলে এই রাষ্ট্র, তার বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রতিবাদ। অনতিবিলম্বে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ এর ১৫৫(৪) ধারাটি বাতিল করার সুস্পষ্ট দাবি নিয়ে নারীদের এই পদযাত্রা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এ ধরনের অবমাননাকর ও বিদ্বেষমূলক চর্চা আমরা দেখতে পাই যেগুলোর মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি নিপীড়নের বৈধতা দান করা হয়। আমাদের এই পদযাত্রা এই চর্চাকে আঙুল দেখানোর জন্য। এই ব্যারিকেড আমরা ভাঙতে চাই।’
আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশে ধর্ষণ হলো একমাত্র অপরাধ, যেখানে অপরাধ ঘটার পর অপরাধের বিচারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় অপরাধের শিকার নারীর চলন-বলন ও পোশাকের দিকে। প্রতিটা ধর্ষণের অভিযোগের পর সমাজের আচরণ দেখে মনে হয়, যেন এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বৈষম্যমূলক মানদণ্ড অনুযায়ী নারীর চলন-বলন ঠিক না থাকলে তার সঙ্গে অন্যায় হওয়াটাই স্বাভাবিক।
সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ এর ১৫৫(৪) ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে ‘অভিযোগকারিণী’ সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা। আইনের এই ধারায় উল্লিখিত শব্দগুলো থেকেই খুবই পরিষ্কার যে, শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা একজন নারীর চরিত্র কেমন— সেটি দিয়ে তার অভিযোগের ন্যায্যতা বিচার করা হয়।
তারা আরও জানান, রাষ্ট্র খুবই স্পষ্ট ও সহজ উপায়ে একটা জঘন্য অপরাধকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতেই অস্বীকার করছে। নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর এই আইন বলবৎ থাকার কারণে নারীকে কাঠগড়ায় দেখাতে হয় তার চারিত্রিক সনদপত্র, উত্তর দিতে হয় আসামিপক্ষের আইনজীবীর জঘন্য সব প্রশ্নের। আমাদের আদালত এসব নোংরা নিপীড়নের চর্চা চুপ করে শুনে যান।