সোনারগাঁয়ে একই সীমানায় মন্দির-মসজিদ, শত বছরেও নেই বিরোধ
নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁ টাইমস২৪ ডটকম :
কয়েকশত বছর পুরোনো ইছুবগঞ্জ জামে মসজিদ এবং তৎসংলগ্ন শ্রী শ্রী সাধুবাবা সম্ভুনাথ ব্রহ্মচারীর সমাধি রয়েছে সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ইছুবগঞ্জ গ্রামে একই সীমানায় ধর্মপ্রান মুসলমানরা মসজিদে নামাজ আদায় করেন এবং একই সীশানায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে পূজা আরতি পালন করে।
জানা যায়, সম্রাট ইশা খাঁ আমলে বিভিন্ন দেশ থেকে বাণিজ্য করতে সোনারগাঁয়ে আসতেন মুসাফিররা। তৎকালীন সময়ে ইউসুফ সওদাগরের জাহাজ ঘুর্ণিঝড়ের কবলে পড়লে তিনি আল্লাহপাকের কাছে ফরিয়াদ করেন যে, হে মহান সৃষ্টিকর্তা তুমি আমার এই জাহাজ যেখানে ভিরিয়ে দিবেন, আমি সেখানেই একটি মসজিদ তৈরি করে দিবো। তার কথা অনুযায়ী মহান সৃষ্টিকর্তা তাহার জাহাজটি সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া মাঝিবাড়ি এলাকায় এসে থামে। তাই ইউসুফ সওদাগরের নাম অনুযায়ী মসজিদের নামকরণ করা হয় ইউসুফগঞ্জ জামে মসজিদ। পাশাপাশি তৎকালীন মসজিদ সংলগ্ন একই সীমানায় হিন্দু ধর্মালম্বীরা শ্রী শ্রী সাধুবাবা সম্ভুনাথ ব্রহ্মচারী সমাধিস্থলে একটি আশ্রম তৈরি করে সেখানে পূজা পালন করতো। সেই সময় থেকে যে যার মতো করে ধর্ম পালন করে আসছে। এই দুই ধর্মের মাঝে এখনো পর্যন্ত এই স্থানে কোন বিপর্য বা হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়নি।
শ্রী শ্রী সাধুবাবা সম্ভুনাথ ব্রহ্মচারী সমাধিস্থলের সেবিকা সবিতা রানী দাস জানান, তৎকালীন ঢাকা জেলার রায়পুরা থানার রায়পুরা গ্রামের ডা. জগবন্ধু দাস গত ৩ ভাদ্র, ২২৮৩ বঙ্গাব্দ তারিখে এই আশ্রমটি পুননির্মাণ করেন। আমার শশুরের আমল থেকে শুরু করে আমরা এই সমাধিস্থলের সেবা যত্ন করে আসছি। বিগত ৫০ বছরেও পূজা পালন নিয়ে আমরা মুসলমান ভাইদের কাছ থেকে কোন কটু কথা শুনিনি। নামাজের সময় হলে আমরা পূজার সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখি এবং নামাজ শেষ হলেই পুনরায় পূজার কার্যক্রম শুরু করি। মসজিদে যাতে মুসলমান ভাইদের নামাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আমরা সব সময় লক্ষ্য রাখি। পূজার সময় এলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সহযোগীতা করা হয়। মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইয়েরা আমাদের খাদ্য ও নগদ অর্থসহ সার্বিক সহযোগীতা করেন। সোনারগাঁও উপজেলা প্রশাসন আমাদের পূজা মন্ডপ গুলোতে সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।