কালো কোটে সন্ত্রসী থাবা আদালতের ইতিহাসে এমন নির্বাচন কেউ দেখেনি
ডেস্ক রিপোর্টে, সোনারগাঁ টাইমস ২৪ ডটকম : সম্প্রতি আইনজীবীদের নির্বাচনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদা হায়দার খান কাজল । ওসমান পরিবার অনুগত এই ব্যবসায়ী নেতা সেদিন বার ভবনের ভেতরেই আইনজীবীদের উপর হাত তুলেছেন , মারধর করেছেন বহিরাগতদের নিয়ে । যা নিয়ে ব্যাপক সমালােচনার জন্ম দিয়েছে । সর্বমহলে। খালেদ হায়দার খান কাজলের এমন কর্মকাণ্ডে যারপরনাই ক্ষুব্ধবিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা ।
ওই ঘটনায় শুধু আইনজীবীরাই যে ক্ষুব্ধ , তা নয়, সচেতন মানুষও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার এই কাণ্ডকে সন্ত্রাসী কাণ্ডের সাথেই তুলনা করেছেন বিএনপির চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী অ্যাডভােকেট তৈমূর আলম খন্দকার। একই সাথে বিএনপির এই নেতা ২৮ জানুয়ারি আইনজীবীদের উপর হামলার ঘটনায় সাংসদ শামীম ওসমানকেও দায়ি করেছেন। তার দাবি, আইনজীবীদের উপর হামলার দায় কোনােভাবেই এড়াতে পারেন না সাংসদ শামীম ওসমান। সূত্র জানায়, ২৮ জানুয়ারি ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পৃথক দুটি প্যানেল ঘােষণা করে। এর বাইরে একজন আইনজীবী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভােটের লড়াইয়ে নেমেছিলেন।
ভােটের পূর্বেই বিএনপি প্যানেলের আইনজীবীরা নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এই শঙ্কা থেকে তারা ডিসি ও এসপির সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং লিখিত দিয়ে তাদের সহযােগিতাও প্রত্যাশা কেরছিলেন। ফলে প্রশাসন থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করাসহ সুষ্ঠু পরিবেশ যাতে বজায় থাকে সে ব্যাপারে সহযােগিতার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। তবে, বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের দাবি, প্রশাসন থেকে কোনাে রকম সহযােগিতাই করা হয়নি। নির্বাচনের দিন ভােট গণনার একটু আগেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভােটের ফলাফল পরিবর্তনের চেষ্টায় আদায়কৃত ভােটের থেকেও অতিরিক্ত ভাের্ট গ্রহণের পরিসংখ্যান দেখানাে হয়। এর প্রতিবাদ করেছিলেন বিএনপি পন্থী আইনজীবী প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অ্যাড .কামাল হােসেন মােল্লা ।
বিএনপির অভিযোগ এই প্রতিবাদ করার সাথে সাথেই জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খােকন তাকে বেদম মার শুরু করেন । বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধিন রয়েছেন । বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের অভিযােগ, তাদের সেক্রেটারি প্রার্থীকে মারা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে বার ভবনে দৌড়ে যান এই প্যানেলের জুনিয়র তিন আইনজীবী । তারা সেখানে যাওয়া মাত্রই তাদেরকে মারধর শুরু করেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদা হায়দার খান কাজল। পাশাপাশি তিনি বার ভবনে ভােট গণনার কক্ষে থাকা বহিরাগত আওয়ামী লীগ , যুবলীগ , ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদেরকেও মারধর করার নির্দেশ দিলে আইনজীবীদেরকে গণহারে মারা শুরু করে তারা।
বিএনপি পন্থী আইনজীবী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, চোরপেটানাের মত করেই সেদিন আইনজীবীদের পিটিয়েছিলেন তারা। এই ঘটনার দৃশ্যধারণ করতে গেলে কয়েকজন সাংবাদিকদেরও পেটানাে হয়েছিল ওইদিন। উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী একজন বিএনপি পন্থী আইনজীবী অ্যাডভােকেট আব্দুল হামিদ খান ভাসানি ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে জানিয়েছেন, চোর বাটপারকে মানুষ যেভাবে পেটায় সেদিন সেভাবেই পেটানাে হয়েছিলাে আইনজীবীদের। পেটানাে শুরু করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার সভাপতি খালেদা হায়দার খান কাজল। তিনি আইনজীবীদের চোরের মতাে টেনে হিচড়ে এনে লাথি ঘুষি দেওয়ার পাশাপাশি অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদেরও মারতে নির্দেশ দিলে ভীতকর এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সেদিন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা গণহারে পেটাতে শুরু করেন যা ন্যাক্কারজনক। বার কাউন্সিল নির্বাচনের ইতিহাসে এমন ঘটনা অতীতে আর একটিবারও ঘটেনি। ওই ঘটনায় বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভােকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, যেহেতু শামীম ওসমানের উপস্থিতিতে তারই অনুগত নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি কাজলের নেতৃত্বে আইনজীবী ও
সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়েছে, সেহেতু শামীম ওসমান এ সন্ত্রাসী ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার দায় অস্বীকার করতে পারে না। কাজল একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়ে নিজেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সম্মানিত ব্যবসায়িক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির শত বছরের নির্বাচনের ইতিহাসে এটাই প্রথম আইনজীবীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা। আইনজীবী ভবনে সন্ত্রাসীদের হামলা নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র একজন আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইনজীবীদের উপর বহিরাগতরা যেভাবে হামলা চালিয়েছে, মারধর করেছে তা কখনই সমর্থনযােগ্য না এবং এই ঘটনা বার নির্বাচনের ইতিহাসে এবারই প্রথম।
নির্বাচন কেন, নির্বাচন ছাড়াও আদালতের ভেতরে বহিরাগতরা কখনই আইনজীবীদের উপর হামলা চালাতে পারেনি। ব্লাককোর্টের উপর হাত তুলে কখনই কেউ পাড় পায়নি। তিনি আরও বলেন, বিএনপির সময় বিএনপির আইনজীবীদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগ পন্থী আইনজীবীদের উপর হাত তুলেছিল। কিন্তু সেটা ছিলাে আইনজীবীদের মধ্যে। কখনও বহিরাগতরা এমন আচরণ করতে পারেনি। এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে ঘটনানাের সাহস কেউ দেখাতে না পারে, সে জন্য হামলকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। নয়তাে এমন ঘটনা আরও অনেক ঘটবে। অন্যরাও সাহস দেখাবে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি অ্যাডভােকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, নির্বাচনের দিন এমপি সাহেব তােলারাম কলেজের ছাত্রনেতা রূপে ফিরে গিয়েছিল। সে যেভাবে দুপুর ১ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত আদালত পাড়ায় অবস্থান নিয়েছে বিপুল বহিরাগত নিয়ে, তা ছাত্র রাজনীতির কথা মনে করিয়ে দেয়। আদালতের ইতিহাসে এমন নির্বাচন আগে কেউ দেখেনি। এত বহিরাগতদের উপস্থিতি দেখিয়ে সাংসদ বুঝিয়ে দিল তার দ্বারা সব সম্ভব। সত্যিকার অর্থে কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না