আল্লাহর ভয় -প্রশিক্ষনের মাস মাহে রমজান সমাগত ; লাভ ও গুরুত্ব
আসগার ইবন হযরত আলী, সোনারগাঁ টাইমস ২৪ ডটকম :
চলছে শাবান মাস। আল্লাহর ভয় সৃষ্টির প্যাকেজ নিয়ে সমাগত পবিত্র মাহে মরজান মাস। আল্লাহ প্রতি ভয় কি করে করতে হয়! আল্লাহর স্বরণ প্রতি মুহুর্তে কিভাবে অন্তরে জাগ্রত রাখতে হয় তার বাস্তব প্রশিক্ষনের মাস পবিত্র মাহে মরজান মাস।
ভয়-এর আরবি খাওফ। ভয় হচ্ছে দেহ ও মনের অশ্বস্থি-অশান্তি,অস্থির দু:খ ভারাক্রান্ত কষ্ট ও যন্ত্রনার নাম। এ ভয় বিভিন্ন উপায়ে মানব মনে প্রবেশ করে থাকে।
নদীপথে ঝড়ের কবলে, আকাশ পথে উড়োজাহাজে, স্থল পথে বিভিন্ন যানবাহনে চলাচলের সময় মাল ও জীবনের ভয়। শিক্ষার্থীদের মনে পড়া না পরলে শিক্ষকের শাসন, দুষ্টুমি করলে মায়ের বকনি ও পিতার পিটুনির ভয়। আঁধার রাতে রাস্থায় ডাকাত ছিনতাইকারির ভয়, জঙ্গলে সাপ বিচ্চু, বাঘ-ভল্লুকের ভয়। রাজনৈতিক নেতা-কর্মিদের জন্য সরকারি দলের হামলা-মামলা ও জেল-যুলুমের ভয় ও পুলিশি হয়রানির ভয়। অপরাধিদের জন্যে আইনের শাসনের, জেল ও ফাঁসির ভয় ইত্যাদি। বহু উৎস থেকে বিভিন্ন প্রকার লোকের জন্যে বিভিন্ন প্রকার ভয় আসে।
বিশ্ব শত্রু ইবলিশ চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ সকলের মনে রিযিক ও জীবনের ভয় নামক এসাইনমেন্ট দিয়ে আল্লাহর বিধান কায়েমের কাজ থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে।
তবে যাঁরা প্রকৃত ঈমানদার তাদের মনে এসব ভয় তেমন সুবিধা করতে পারে না। কেননা, আল্লাহর ভয়ে তাঁদের হৃদয় থাকে পরিপূর্ণ, ফলে এ সমস্ত ভয় তাঁদের হৃদয়ে ঠাঁই পায় না। এ ধরণের একজন ঈমানদারকে মৃতুর ভয়ও পরাজিত করতে পারে না। তারা হুংকার দিয়ে বলেন, মৃত্যুর ফায়সালা জমিনে নয়, আসমানে হয়।
ঈমানদার লোকেরা আল্লাহর ভয়কেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। তাই তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে ও সত্যের আহবান করতে কখনো পিছপা হননি। প্রয়োজনে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে জীবন দিতেও ভায় পাননা। কারণ তাঁদের মনে আছে শুধু আল্লাহর ভয়।
আল্লাহর ভয় হচ্ছে তাঁর আদেশ না মানলে ও নিষিদ্ধ কাজ করে বসলে মৃত্যুর পর যে শাস্তি ও কষ্ট দেবেন তা। মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা। বিধানদাতা,আইন প্রণেতা, পালনকর্তা, মালিক, মুনিব, প্রভু, হুকুমকর্তা, লালন-পালনকারি, তত্বাবধানকারি।
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের যা যা প্রয়োজন- সব কিছুই তিনি দান করেছেন। শুধুমাত্র তাঁর দাসত্ব করার জন্যই তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দান করেছেন। নিয়োগ কর্তার নিকট নিয়োগকৃত ব্যক্তিকে তার কৃতকর্ম/ নিয়োগের উদ্দেশ্য ও তার দায় দয়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হয়। সেমতে, প্রত্যেক মানুষই আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।
ইনসাফের সাথে, ন্যায় বিচারের স্বার্থে, আমাদের কার্যক্রম রেকর্ড করার জন্য প্রত্যেকের সাথেই দু’জন করে সম্মানিত লিখক নিয়োগ করেছেন। তাঁরা ২৪ ঘণ্টাই কর্মতৎপর থাকেন। আমাদের প্রতিটি মুহূর্তের, প্রকাশ্য-গোপন প্রত্যেক কাজেরই ছবিসহ তাঁরা রেকর্ড করছেন। এমনকি মনের কল্পনারও রেকর্ড করা হচ্ছে। প্রতিবেদন তৈরি করে রাখছেন। মৃত্যুর পর আদালতে আখেরাতে হাশরের মাঠে আল্লাহর নিকট এ রেকর্ড অনুযায়ী আমাদেরকে পার্থিব কৃতকর্মের হিসেব দিতে হবে। এ বিষয়টি মনে রেখে দুনিয়ার জীবন পরিচালনা করলে এবং তাঁর ভয় অন্তরে জাগ্রত থাকলে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর বাণী- “আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়িয়ে হিসেব দিতে হবে, এ ভয়ে যে ব্যক্তি ভীত থাকে এবং যাবতীয় কু-প্রবৃত্তি থেকে নিজকে রক্ষা করে চলে, জান্নাতই তার ঠিকানা হবে। (নাযিয়াতঃ ৪০—-৪১)
হে ঈমানদারগণ! সবরের পথ অবলম্বন কর, বাতিলের মোকাবেলায় দৃঢ়তা দেখাও, দ্বীনে হক্বের খেদমতের জন্য ওঠে পড়ে লাগ, আর আল্লাহকেই ভয় করতে থাক, আশা করা যায়, তোমরা সফলকাম হবে। ( ইমরানঃ ২০০ )
হে মানুষ! তোমরা ভয় কর তোমাদের রবকে। ক্বিয়ামতের ভূ-কম্পন হবে এক ভয়ংকর ব্যাপার। ( হজ্জঃ ২ )
তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এরং আমার আনুগত্য কর। ( ইমরানঃ ৫০)
হ্যাঁ, কেউ যদি তার অঙ্গীকার পূরণ করে এবং আল্লাহ ভীতি অবলম্বন করে, তাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ মুত্তাক্বীদের ভালবাসেন। ( ইমরানঃ ১৫)
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর, হক্ব আদায় করে। ( ইমরান ঃ ১০২ )
তোমরা যদি সবরের পথ অবলম্বন কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, তবে তাদের (শত্রুদের ) ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। ( ইমরানঃ ১২০)
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়োনা। আল্লাহকে ভয় কর। আশা করা যায়—- তোমরা সফলকাম হবে। ( ইমরানঃ ১৩০ )
তবে যারা তাদের প্রভুকে ভয় করবে, তাদের জন্য থাকবে জান্নাতসমূহ; যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। ( ইমরানঃ ১৯৮ )
হে মানবজাতি! তোমরা রবকে ভয় কর, তোমাদের যিনি সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে। ( নিসাঃ ০১ )
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেকেই যেন খেয়াল রাখে যে, সে আগামি দিনের জন্য কি যোগাড় করে রেখেছে। আল্লাহকেই ভয় করতে থাক, আল্লাহ তোমাদের প্রত্যেকটি কাজ সম্পর্কে সম্মক অবগত আছেন। ( হাশরঃ ১৮ )
তোমাদের আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখ, নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত কঠিন শান্তি দানকারি। (বাকারাঃ ১৯৬)
যারা আল্লাহকে ভয় করে জীবন-যাপনের সিদ্ধান্ত নেয়, আল্লাহ তাদের চলার পথ খুলে দেন; আর তাদের জন্য এমন জান্নাত থেকে রিযিকের ব্যবস্থা করে দেন, যা তারা কল্পনাও করতে পারে না। (তালাকঃ ১২০ )
যে আল্লাহকে ভয় করে, তাক্বওয়া অণুসরণ করে, আল্লাহ তাকে সংকট থেকে উদ্ধার করেন এবং তাকে অবারিত রিযিক দান করেন। ( আন ফানঃ ৩৪ )
নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাক্বীদের ভালবাসেন।(ইমরানঃ৭৬)
যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর সীমা লংঘন থেকে দূরে থাকে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব মুত্তাক্বীদের সাথে আছেন।(বাকারাঃ ১৯৪ )
তোমাদের মধ্যে সে-ই অধিক সম্মানিত, যে আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করে।(হুজরাতঃ ১৩ )
যারা ঈমান আনে ও তাক্বওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে সু-সংবাদ। (হা- মীম আস সেজদাঃ ১৮ )
নিশ্চয়ই মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণা ধারার মধ্যে থাকবে। (দোখানঃ ৫১ )
যারা নিজেদের পালন কর্তাকে ভয় করে তাক্বওয়া অর্জন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কক্ষের ওপর কক্ষ।(যুমারঃ ১২০ )
মুত্তাক্বীরা থাকবে জান্নাত ও নহরে, সত্যের আসনে, সর্বাধিপতি শাহান শাহের সান্নিধ্যে। (কামারঃ ৫৪–৫৫)
মুত্তাক্বীদেরকেই আমি জান্নাতের উত্তরাধিকারি বানাব। (মরিয়ামঃ ৬৩ )
যারা ঈমান এনেছে ও তাক্বওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য সু-সংবাদ—দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতে। আল্লাহর বাণীর কোন পরিবর্তন নেই। (ইউনুসঃ ৬৩–৬৪)
নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাহদের মধ্যে কেবল আ’লীমরাই তাঁকে গুরুত্বের সাথে ভয় করে।(ফাতিরঃ ২৮)
আল্লাহ তো তাদের সাথেই রয়েছেন, যারা তাক্বওয়া সহকারে কাজ করে এবং ইহসান অনুসারে আমল করে। (নাহলঃ ১২৮ )
আর সফলকাম হবে ঐসব লোক যারা আল্লাহ ও রসূলের হুকুম পালন করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর নাফরমানী থেকে দূরে থাকে। ( নূরঃ ৫২ )
রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর। আর যা থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখেন,তা থেকে বিরত থাক। আল্লাহকে ভয়কর, তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (হাশরঃ ০৯)
যারা নিজেদের না দেখা রবকে ভয়করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও অতি বড় সুফল। ( মূলকঃ ১২ )
হে নবী! আল্লাহকে ভয় কর এবং কাফের ও মুশরিকদের আনুগত্য করো না। (আহযাবঃ ০১)
তোমরা যথাসম্ভব আল্লাহকে ভয় কর। ( তাগাবুনঃ ১৬)
আল্লাহকেই ভয় কর, সম্ভবতঃ তোমরা কল্যাণ লাভ করবে। (বাকারাঃ ১৮৯)
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয়কর তোমরা কল্যাণ লাভ করবে। (মায়েদাঃ ৩৫ )
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যাদর্শ লোকদের সঙ্গী হও। (তওবাঃ১১৯)
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর,তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান কর এবং তাঁর পথে চৃড়ান্ত চেষ্টা সাধনা বা জিহাদ কর। সম্ভবত: তোমরা কল্যাণ লাভ করবে। (মায়েদা: ৩৫)
রসূলুল্লাহ সা. এর বাণীঃ
হযরত আবু কাহেল রা. থেকে বর্ণিত-
রসুল স.বলেন, এক ব্যক্তি অনেক পাপ করেছিল, যখন তার মৃত্যু ঘনিয়ে এল, তখন তার ছেলেদের ডেকে বলল- আমার মৃত্যুর পর তোমরা আমার লাশটি পুড়িয়ে চূর্ণ -বিচূর্ণ করে বাতাসে উড়িয়ে দিও। কেননা, আল্লাহ আমাকে ধরতে পারলে, এমন শাস্তি দেবেন, যা আর কাউকে দেবেন না। লোকটি মারা যাওয়ার পর তার ছেলেরা তার অছিয়ত মত কাজ করলো। ওদিকে, আল্লাহ তাৎক্ষণিক মাটিকে আদেশ দিলেন পোড়ানো লাশের ছাইগুলো একত্রিত কর। মাটি আদেশ পালন করলো। তৎক্ষণাৎ লোকটি আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হলো। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি তোমার ছেলেদেরকে এরূপ অছিয়ত করেছিলে কেন? সে বললঃ হে আল্লাহ,আপনার ভয়ে। আল্লাহ তৎক্ষণাৎ তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। অন্য বর্ণনায়,লাশ পুড়িয়ে অর্ধেক ছাই মাটি ও অর্ধেক পানিতে ছড়িয়ে দেয়ার কথা রয়েছে। (বুখারী, মুসলিম, মালেক, নাসায়ী )
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত। রসূল স. বলেনঃ আল্লাহ তার ফেরেশতাদের বলবেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে একদিনও সরণ্ম করেছে, কিংবা কোন একটি স্থানেও আমাকে ভয় করেছে, তাকে দোযখ থেকে বের করে নিয়ে এসো। (তিরমিযী, বায়হাকি)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রসূল স. বলেছেনঃ আল্লাহ বলেনঃ
“আমার বান্দাহর ওপর এক সাথে দু’ভীতি ও দু’নির্ভিকতা আমি একত্রিত করি না। সে যখন দুনিয়ায় আমাকে ভয় করে, তখন আখেরাতে তার আর কোন ভয় থাকবে না। আর সে যখন দুনিয়ায় আমাকে ভয় করে না, তখন আখেরাতে তাকে আমি ভীতিকর পরিস্থিতিতে নিক্ষেপ করবো।”(ইবনে মাজা )
হযরত আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত। রসূল স. বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, সে অবশ্যই বাঁধা-বিঘ্ন অগ্রাহ্য (আল্লাহর হুকুম পালনে সে পিছপা হয়না কখনও।) করে। আর যে বাঁধা-বিঘ্ন অগ্রাহ্য করে, সে অবশ্যই লক্ষ অর্জনে সক্ষম হয়। (তিরমিযী)
হযরত ইবনে কাহেল রা.থেকে বর্ণিত। রসূল স. বলেনঃ মহা প্রতাপশালী আল্লাহ সে ব্যক্তির ওপর রাগান্বিত হন না এবং তার দেহের একটি অংশও আগুনে খায় না, যার মনে আল্লাহর ভয় আছে। (বড় হাদীসের অংশ বিশেষ , তাবরানী )
হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত। রসূল স. বলেনঃ আমি যা জানি ( আখেরাতের আযাব সম্পর্কে ) তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে তোমারা বেশি করে কাঁদতে, কম হাসতে (সংক্ষিপ্ত-)
হযরত ওয়াসেলা ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত। রসূল স. বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, পৃথিবীর সকল সৃষ্টি তাকে ভয় পায়, আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না, প্রতিটি সৃষ্টিই তাকে ভয় দেখায়। ( কিতাবুস্ সওয়াব )
আতিয়া আস-সাদী রা.থেকে বর্ণিত। রসূলূশ্লাহ স. বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে যেসব কাজে গুনাহ নেই, তা পরিত্যগ না করা পর্যন্ত খোদাভীরু লোকদের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে না। ( তিরমিযী, ইবনে মাজা )
ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। রসূল স. বলেনঃ আল্লাহর নির্ধারিত রিযিক পূর্ণমাত্রায় লাভ না করা পর্যন্ত কোন লোকই মারা যাবে না। সাবধান! আল্লাহকে ভয় কর এবং বৈধ পন্থায় আয় উপার্জনের চেষ্টা কর—–( ইবনে মাজা )
হযরত আবুযর গিফারী রা. থেকে বর্ণিত। আমি রসূল স. কে বললামঃ আমাকে নসীহত করুনঃ তিনি বললেনঃ –তুমি আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন কর। কেননা, ইহা তোমার সমস্ত কাজকে সুন্দর, সুষ্ঠু ও সৌন্দর্য মন্ডিত করবে। ( বায়হাকী )
এভাবে আল্লাহ ও তাঁর রসূল স-এর আরও অনেক মূল্যবান বাণী রয়েছে আল্লাহর ভয় সম্পর্কে।
আল্লাহর ভয়ে কি লাভঃ
উপর্যুক্ত বাণীগুলুর আলোকে কোন মুমিনের অন্তরে যদি আল্লাহর ভয় থাকে, তার লাভ হচ্ছেঃ জন্নাত হবে তার ঠিকানা। দুনিয়ায় কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা লাভ। সফলতা ও আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন।ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকবে। জান্নাত থেকে রিযিক প্রাপ্তির নিশ্চয়তা লাভ। আল্লাহ তাকে সংকট থেকে উদ্ধার করেন ও অবারিত রিযিক দেন। আল্লাহ তার সাথে থাকেন, সে সম্মানিত হয়। দুনিয়া ও আখেরাতে তার জন্য রয়েছে সু-সংবাদ। জান্নাতে পাবে কক্ষের ওপর কক্ষ(বহুতল বিঃ ভবন। জান্নাতে শাহানশাহের সান্নিধ্য লাভ করবে। আল্লাহ তাকে জান্নাতের উত্তরাধিকারি বানাবেন। তার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। তাকে দোযখ থেকে বের করে নিয়ে আসা হবে। আখেরাতে তার কোনো ভয় থাকবে ন। দুনিয়াতে আল্লাহর বিধান পালনে তাকে কোন বাঁধাই ঠেক দিয়ে রাখতে পারে না। মহান আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন না এবং তার দেহের কোন অংশই দোযখের আগুনে খাবে না। সে কোনো সৃষ্টিকেই ভয় পায় না’ বরং পৃথিবীর সকল সৃষ্টিই তাকে ভয় পায়। সে খোদাভীরুদের অন্তর্ভুক্ত হয়। তার সমস্ত কাজ সুন্দর, সুষ্ঠু ও সৌন্দর্য মন্ডিত করবে। দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে প্রভূত কল্যাণ লাভ হবে। তাছাড়া, রাষ্ট্রপতি, সচিব, এম.পি, মালিক-শ্রমিক, বড় বড় কর্মকর্তা, মেম্বার, চেয়ারম্যানগিরিসহ বড় বড় পদ হারানোর/ জেলে যাওয়া/ ফাঁসিতে ঝুলার সম্ভাবনাও থাকবে না। সর্বহারা, কপাল পোঁড়া হতে হবেনা। চাকরিচ্যূত হতে হবে না।
তবুও চুরি করবেন? অপকর্ম করে অকালে জীবন দেবেন? সর্বহারা হবেন? লান্ছনাকর জীবন-যাপন করবেন? অকালে প্রাণ হারাবেন? নাহ! পদস্থ কর্মকর্তাগণ ও শাসক গোষ্ঠীসহ সকলেই চুরি,বাটপারি ছেড়ে দিন।
আল্লাহর ভয় অন্তরে ধারণ করে সর্বপ্রকার অপকর্ম ছেড়ে দিয়ে সম্মানজনক জীবন যাপন করুন।
সত্যিই আল্লাহর ভয়ে মুমিনের জন্যে রয়েছে অফুরন্ত লাভ; যাতে লোকসানের আশংকা নেই, লাভের শেষ নেই। তার জন্যে রয়েছে–দুনিয়ার জীবনে আনাবিল সুখ-শান্তি ও নিশ্চিত বিজয় আর পরকালে রয়েছে অফুরন্ত সুখের ঠিকানা জান্নাত।
অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে চিন্তা করুনঃ একজন মন্ত্রী, এম. পি. সচিব, পদস্থ কর্মকর্তা, প্রতষ্ঠান প্রধান, সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, এমনকি রাষ্ট্র প্রধানের মনেও যদি আল্লাহর ভয় না থাকার কারণে চুরি, ধর্ষণসহ মারাত্মক অপকর্ম করে বসে এরং ধরা পড়ে তবে তার আকাশচুম্বি সম্মান-মর্যাদা, মূল্যবান পদ, চাকরি সবই হারাতে হয়। শুধু তাই নয়, জেল- জরিমানা হয়। সর্বশান্ত হতে হয়। এমনকি ফাঁসিতেও লটকানো হয়।
উদাহরণস্বরূপ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাযিল মাদরাসার ছাত্রি নুসরাত জাহান রাফির ধর্ষক ও হত্যায় সিরাজ উদ দৌলা অধ্যক্ষের পরিণতির কথাটা চিন্তা করুন।
তার মনে যদি আল্লাহর ভয় থাকতো তবে কি সে ছাত্রিকে ধর্ষণ ও হত্যা করতে পরতো?
আল্লাহর ভয় না থাকার কারণেই সে নিজের ছাত্রির শ্লীলতাহানি ও আগুনে পুঁরে হত্যা করেছে।
ফলে সে অপমানিত হলো, অধ্যক্ষের মতো বিশাল মর্যাদাবান পদ ও পৃথিবীর চেয়ে বেশি মূল্যবান জীবন দুটোই হারালো, ফাঁসিতে ঝুললো। আল্লাহ আবার কী ধরণের মেহমানদারি করবেন কে জানে?
শুধু আল্লাহর ভয়ের অভাবে এ ধরণের লাখ লাখ ঘটনা ঘটছে আর দুনিয়ায় হাজার হাজার বনি আদমের এ ধরণের অশুভ পরিণতির শিকার হচ্ছে; আর পরকালের শাস্তিতো পরে রয়েছেই। এরপরও কি সতর্ক-সাবধান হবো না ? আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে অন্যায়-অপকর্ম থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরে রাখবো না ?
কবির কণ্ঠেঃ
“তোমার বুকে রেখ আল্লাহরই ভয়, আসবে না কোনো দিন, কোনো পরাজয়।”
গুরুত্বঃ
কম্বল চুরি থেকে শুরু করে ত্রাণের চাল, ডাল, তেল, রাস্তার গম, গরীবের মুখের খাবার, পরনের কাপড়, ব্যাংক ডাকাতি, রুগীর ওষধ, সেতুর হাজার হাজার কোটি টাকা ইত্যাদি আত্মসাত করার মূলে রয়েছে পরকালে অবিশ্বাস ও আল্লাহর ভয়শূন্য অন্তর।
আল্লাহর ভয় এতোই গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী যে, দুনিয়ার শক্তিশালী ও সু-সংগঠিত আর্মি, রেব, BDR,পুলিশ বাহিনীর চেয়েও বহুগুণে বলবান/শক্তিশালি ; কারণ, রাতের আঁধারে, আরালে-আবডালে এঁদেরকে ফাঁকি দিয়ে অপরাধ করা যায়।
পক্ষান্তরে, আল্লাহর ভয় পোষণকারি ব্যক্তির পক্ষে কোন অপরাধ সংগঠন আদৌ সম্ভব নয়। এ সম্পদ কোন মেম্বার, চেয়ারম্যান, এম পি, মন্ত্রী, সর্ব প্রকার কর্মকর্তাঃ পেটি অফিসার থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত এবং সাধারণ সিপাহী থেকে শুরু করে পুলিশের সর্বোচ্চ অফিসার পর্যন্ত এবং উচ্চ পদস্থ কর্ম-কর্তা কর্মচারীসহ আপামর জনতার অন্তরে যদি আল্লাহর ভয় জাগ্রত থাকে, তবে কেউ একটি পয়সাও ঘুষ খাবে না। কেউ ঘুষ দেবেও না। চুরি -ডাকাতি, খুন-খারাপিসহ কেউ কোন অপরাধই করবে না।
অন্যথায়, এসব আপরাধের কারণে পরকালে অনন্তকাল জাহান্নামের কঠিন আযাব ভোগ করতে হবে। পক্ষান্তরে, দুনিয়ায় যেমন খোদাভীরুদের সম্মান-ইজ্জত বৃদ্ধি পাবে; তেমনি পরকালেও তারা পাবে জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পাবে এবং যেখানে চিরকাল সুখ-শান্তি ভোগ করবে।
দুনিয়াটিও হবে জন্নাতের একটি অংশ। খুন-খারাপি, ধর্ষণ,লুট- পাট, ধোঁকাবাজি, ছলছাতুরি, মারামারি-কাটাকাটি, প্রতারণা, জালিয়াতি, আত্মসাৎ, ফাঁকিবাজি, ফটকাবাজি, ঠগবাজি, কালোবাজারি, মওজুতদারি, খেয়ানত, ওয়াদা/ চুক্তিবঙ্গ, মদ- জুয়া, অশ্লীলতা, নগ্নতা, বেহায়াপনাসহ যাবতীয় অন্যায় ও শয়তানি কার্যক্রম বন্ধ হবে।
সকল মানুষই সূখে -শান্তিতে জীবন -যাপন করার সুযোগ পাবে। দুঃখ-কষ্ট আর ঝুলুম-নির্যাতন বিদায় নেবে। আসুন আমরা মহান আল্লাহর ভয়ে ভীত থেকে যাবতীয় অন্যায়কে না বলি এবং দুনিয়াবাসিকে নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেই, আর নিজেরাও নিরাপদ থেকে জান্নাতের পথে এগিয়ে যাই।