ছাত্রলীগ সভাপতির পদ ত্যাগ করে হেফাজতের আন্দোলন সমর্থন
ডেস্ক রিপোর্টে, সোনারগাঁ টাইমস২৪ ডটকম :
হেফাজতে ইসলামের চলমান আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে এক ছাত্রলীগ নেতা পদত্যাগ করেছেন। যাকে ধর্মীয় বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে ঈমানী দীপ্ত বলিয়ান তরুণ সে। একটি ইসলামি সঙ্গীতের সুরর প্রভাব পরেছ- ” যে ঈমান প্রয়োজনে জ্বলে উঠে না, কি করে তারে বলো ঈমান বলি”?
ওই নেতা জকিগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজ মাজেদ। শনিবার রাতে তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে এক স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগী ছাত্রলীগ সভাপতির ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখা যায়, তিনি পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘মুসলিম জনতার মানবতাকে উপেক্ষা করে ভারতের ইসলাম বিদ্বেষী, সীমান্ত হত্যাকারী, কাশ্মীর দখলকারী, কসাই মুদিকে দেশে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ও নামাজি মুসলমানদের ওপর বর্বর নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘৃণ্যতম কাজের কারণে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।
হাফিজ মাজেদ ছাত্রলীগকে বয়কটের ঘোষণা দিয়ে নানা বিতর্কিত লেখা পোস্ট করেন। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে তৃণমূল ছাত্রলীগ নেতাদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তৃণমূল ছাত্রলীগের একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজপথের ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে ও অবমূল্যায়ন করে ছাত্রলীগের কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী ও অন্য দলের এজেন্টদেরকে পদপদবী দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন ভুইফোঁড় সংগঠনের নামেও শিবির-ছাত্রদলসহ বিরোধী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে আওয়ামী ব্যানারের নিচে নিরাপদে স্থান করে দেয়া হয়েছে। সুযোগ পেলে তারাই সংগঠনকে বিতর্কের মাঝে ফেলে দেয়। পদপদবী দেবার সময় ত্যাগীদের বঞ্চিত করার কারণে বৃহৎ সংগঠনটি কঠিন সময়ে কলঙ্কিত হয়।
তারা আরও জানান, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন কমিটিসহ ওয়ার্ড কমিটিগুলোতেও অনুপ্রবেশকারী অসংখ্য পদধারী রয়েছে। এই অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে আছেন দলের কঠিন সময়ের পরীক্ষিত কর্মীরা। সুদিনে অনুপ্রবেশকারীরা সংগঠনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকায় তাদের দাপটে প্রকৃত ছাত্রলীগ কর্মীরা খুবই অসহায়। ত্যাগী অনেকজন অনুপ্রবেশকারীর কুনই ঠেলায় রাজনীতি থেকেও দূরে সরে গেছেন। দলের ভিতর অনুপ্রবেশকারীরা ছদ্মবেশে ঘাপটি মেরে পদপদবী নিয়ে বসে আছে বলে প্রকাশ্যে বহু অভিযোগ রয়েছে। সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় তারাই রাজপথে না গিয়ে ধর্মের বাহানা সামনে এনে নীরব ভূমিকা পালন করে।
অভিযোগ রয়েছে, কতিপয় নেতারা তাদের বলয় গড়তে বিরোধী সংগঠন থেকে আগত নেতাকর্মী দিয়ে বলয় বৃহৎ করে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছেন। বিরোধী সংগঠনের সমর্থকরাও তাদের প্রশ্রয়ে নিরাপদে আছেন। সিনিয়র নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডেও ক্ষোভ আছে অনেকের মনে। এখনই এদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করতে তৃণমূল কর্মীরা দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি বাবর হোসাইন চৌধুরী বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচি পালন না করার কারণে ত্যাগীরা অভিমানে নীরব হয়েছেন।
ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী আছেন স্বীকার করে তিনি বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের ব্যর্থতার কারণেই অনুপ্রবেশকারীরা কেন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়। হেফাজতের নৈরাজ্যর প্রতিবাদে গত ২৭ মার্চও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছিল কিন্তু উপজেলা ছাত্রলীগ তা বাস্তবায়ন করেনি। পরে তৃণমূল ছাত্রলীগ বিক্ষোভ করেছে। ছাত্রলীগের কমিটিতে পদপদবী নিয়ে সুবিধাভোগীরা বসে থাকলেও সরকার বিরোধীদের নানা ইস্যুতেও তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও নীরব ভূমিকায় থাকেন। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই। নতুন কর্মী সংগ্রহ না করেই আগতদের লালন পালন করা হচ্ছে বলে দাবী করেন তিনি।
পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজ মাজেদ এখন ছাত্রলীগের কোনো দায়িত্বে নয়। তিনি প্রায় দুই বছর আগে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর প্রবাসে চলে যাবার কারণে পদত্যাগ করেছেন। এখন হেফাজত ইস্যুতে পদত্যাগ করেছেন বলে তার জানা নেই বলে জানান।
তিনি বলেন, পৌরসভা ছাত্রলীগে কোন অনুপ্রবেশকারী নেই। ওয়ার্ড কমিটিগুলোতে অনেক যাচাই বাছাই করে পদপদবী দেয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন গ্রুপে অনুপ্রবেশকারী আছেন বলে স্বীকার করেছেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দেলোয়ার চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, পৌরসভা ছাত্রলীগ আলাদা একটি ইউনিট। তাই তারাই ভালো বলতে পারবে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি কেন পদত্যাগ করলেন। এরপরও বিষয়টি দুঃখজনক। এত ত্যাগী ছাত্রলীগ কর্মী থাকাকালে কিভাবে অনুপ্রবেশকারী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পায়। তা তারাই বলতে পারবে।
উপজেলা ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী রয়েছে- এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগে কোনো অনুপ্রবেশকারী নেই। উপজেলা শাখা যে কোনো ইউনিয়ন কমিটি গঠনের আগে ভালো করে যাচাই বাছাই করে নেতা নির্বাচিত করে। এরপরও অনুপ্রবেশকারী কেউ ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ে আসলেও আমরা তাকে কমিটিতে স্থান দেই না।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে তাৎক্ষণিক কেন্দ্রীয় কর্মসূচির খবর পাননি। তবে হেফাজতের হরতাল প্রতিহত করতে সারাদিন ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে মাঠে ছিলেন। ছাত্রলীগের তৎপরতার কারণে জকিগঞ্জের কোথাও হেফাজত কর্মীরা পিকেটিং করতে পারেনি। জকিগঞ্জ ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
সূত্র- যুগান্তর