নাসিক নির্বাচনে আইভীকে বর্জন শামীম ওসমানের
নিজস্ব নিউজ ডেস্ক, সোনারগাঁ টাইমস২৪ ডটকম :
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বর্জন করছেন একেএম শামীম ওসমান। তিনি আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শেখ রাসেল পার্কে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে থাকছেন না। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, বিজয় সমাবেশটি শেষতক ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচনী জনসভায় রূপ নেবে। এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি একেএম শামীম ওসমানকে অনুরোধ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এ নিয়ে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের কয়েক দফায় কথাও হয়েছে। মির্জা আজম নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ড দেখভালের জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব।
একেএম শামীম ওসমানের ইতিবাচক অবস্থান না পেয়ে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশের ব্যানারে তার নাম থাকছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে একেএম শামীম ওসমানের বিস্তর অভিযোগ। তার ভাষায়, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে তাকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ কারণেই তিনি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বর্জন করছেন। বিজয় সমাবেশে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে তিনি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরোধিতা করবেন না। আবার আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ত হবেন না। অবশ্য নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, একেএম শামীম ওসমান জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ায় ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একেএম শামীম ওসমান এবং জেলার সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যকার দূরত্ব দীর্ঘদিনের। এ দুই নেতার শীতল সম্পর্কের কারণে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিরোধ মিটিয়ে ফেলার জন্য গত সোমবার একেএম শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হলেও একেএম শামীম ওসমান আসেননি। কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলার কার্যনির্বাহী কমিটির ওই সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস- এই চার নেতাকে কথা দিয়েও তিনি শেষতক সভায় আসেননি।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একেএম শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যকার মতবিরোধের বিষয়টি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে। একেএম শামীম ওসমান ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও জয় পান নাগরিক পরিষদের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। নির্বাচনের আগের দিন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। সেই থেকে আওয়ামী লীগের দুই নেতা সুযোগ পেলেই পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলে আলোচনায় এসেছেন।
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে আলোচিত দুই নেতার বাগ্যুদ্ধ দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার শিরোনাম পায়। স্থানীয় নেতাকর্মীরা তিক্ততায় জড়িয়ে পড়েন। ওই নির্বাচনে একেএম শামীম ওসমান দলীয় মনোনয়ন চাননি। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের দলীয় প্রার্থিতার পক্ষে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই অবস্থায় একেএম শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ডেকে নিয়ে গৃহদাহ মিটিয়ে দেন।