নির্বাচনের খবর

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না

নিউজ ডেস্ক :


আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের চার-পাঁচ ধাপের ভোট শুরু হতে পারে মার্চেই । ১০০ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা শিগগিরই। এই নির্বাচনে একজনকে প্রতীক দিলে অন্যরা বিরোধিতায় নামেন। এতে দলে বিভেদ বাড়ে এবং দলীয় প্রতীকে ভোটার উপস্থিতি কম হয় বলে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার চিন্তা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে দলের যে কেউ অনেকটা স্বতন্ত্র প্রার্থীর মতো ভোট করতে পারবেন। দলের নেতা-কর্মীরাও যাঁর যাঁর পছন্দমতো প্রার্থীর পক্ষে ভোট করতে পারবেন।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতার মতে, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল বিরোধীদের ভোট বর্জন ও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন। তাই ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করতে হলে দলীয় মনোনয়ন বাদ দিতে হবে। এতে হানাহানি ও সংঘাতও কমতে পারে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি করে আসছে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটা বড় অংশ। কারণ এতে দলের ভিতরে বিভেদ তৈরি হয়েছে। এখন আবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন হলে বিভেদ বাড়বে। এ জন্যই দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

বিএনপি অংশ নিক আর না নিক, আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে।

সূত্রমতে, দলগতভাবে প্রার্থী মনোনয়নের সিদ্ধান্ত থেকে দল সরে আসতে পারে। কিন্তু মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের প্রচারের সুযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এতে তৃণমূলে দ্বন্দ্ব আরও বাড়বে এবং নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আসবে। এ বিষয়ে আলোচনা করছে। গত বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দেওয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ করবেন।

উল্লেখ্য যে, গত ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন প্রণয়নের পর থেকে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়ার নিয়ম এখনো বিদ্যমান।

ভাইস চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও সদস্য পদে যার যার মতো করে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রেই দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরেও আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আগামী সপ্তাহেই প্রথম ধাপে শ খানেক উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

দেশে উপজেলার সংখ্যা ৪৯২। সর্বশেষ ২০১৯ সালে পাঁচ ধাপে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবার দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দল। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, সর্বশেষ নির্বাচনে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে কম ভোট পড়েছে। অতীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ।

২০১৬ সালে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে নিচের স্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতা চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। ফেনী ও বাগেরহাটের অধিকাংশ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদের সব কটিতেই ভোট করতে হয়নি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা-কর্মীর প্রাণহানি ঘটে।

Related Articles

Back to top button