পুলিশ

পুলিশের গুলিতে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক :


নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় পুলিশের গুলিতে হৃদয় ভূঁইয়া নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হন আরও এক যুবক। এ ঘটনায় শনিবার রাতে নিহত হৃদয়ের বড় ভাই মো. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী আজিজ সরকারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহসিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ফল ঘোষণার পর নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী আজিজ সরকার ও সমর্থকদের নিয়ে বিজয় মিছিল করে চলে যায়। পরে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে পরাজিত প্রার্থী কায়সার আহমাদ রাজু পুনরায় ভোট গননার অনুরোধ করেন। পুনরায় ভোট গননা করে রাজুর পক্ষে এক ভোট যুক্ত হয়। এ নিয়ে রাজুর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। রাজু প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে তৃতীয় দফায় ভোট গননার দাবি করেন।

এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে রাজু কৌশলে কেন্দ্রের বাহিরে চলে যান। এ বিষয়টি তার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা লোকজনকে উপজেলায় আসতে বাধা সৃষ্টি করে।

এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে। গুলিতে তাদের একজন সমর্থক হৃদয় নিহত হয় এবং ফারুক নামের আরেকজন আহত হয়। এ সময় পরাজিত প্রার্থী ও তার সমর্থকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিদর্শকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে নিহত হৃদয়ের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম দাবি করেন, নির্বাচনে রাজু জয়ী হন। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন আজিজ সরকারকে জয়ী ঘোষণা করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ফের ভোট গণনার অনুরোধ করলে আজিজ সরকার বহিরাগত লোকজন নিয়ে গুলি করে। এ সময় পুলিশও রাজুর সমর্থকদের ওপর গুলি চালায়। তিনি জানান, তাঁর ভাই পেশায় টাইলস মিস্ত্রি ছিলেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাঁকে আজিজ সরকারের ভাড়াটিয়া বহিরাগত সস্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে।

এ বিষয়ে মোরগ মার্কায় বিজয়ী প্রার্থী আজিজ সরকার জানান, সারাদিন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সংগঠিত হয়। ভোট গণনা শেষে তাকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হলে তার সমর্থকদের নিয়ে আমি বিজয় মিছিল করে বাড়ি চলে আসি। পরবর্তীতে পুলিশের সাথে কিভাবে সংঘর্ষ হয়েছে তা সম্পর্কে তার জানা নেই। প্রায় বিশ মিনিট পর শুনিয়াছি সংঘর্ষের কথা।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানজিলা বলেন, গুলিটি নিহত যুবকের বুকের ডান পাশে লেগেছে। গুলিবিদ্ধ আহত আরেকজনকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আট পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচন শেষে ফল ঘোষণা করে ফেরার পথে কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা করে। এ সময় একজন নারী পোলিং এজেন্ট আহত হন।

সোনারগাঁ থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামান বলেন, নির্বাচন শেষে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় আজিজ সরকারের সমর্থকদের গুলিতে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের মধ্যে হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমানের গত বছরের ২০ মে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে পদটি শূন্য হয়। গতকাল শনিবার সেখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

Related Articles

Back to top button