আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে জান্তা সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহীদের অন্তর্দ্বন্দ্বে ৮৮ সেনা নিহত

নিউজ ডেস্ক, সোনারগাঁ টাইমস২৪ ডটকম :

মিয়ানমারে প্রবাসী সরকারের অনুসারী বলে পরিচিত কয়েকটি বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৮৮ সেনা নিহত।নিহতদের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডারও রয়েছেন। স্যাগাইন ও মাগে অঞ্চল এবং কায়াহ প্রদেশে এই সংঘর্ষ হয়। গত শনিবার থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতি এ তথ্য জানিয়েছে।
ইরাবতির খবরে জানানো হয়, স্যাগাইনের প্যালে শহরে মিয়ানমারের প্রবাসী সরকারের বাহিনী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) সদস্যদের হামলায় ছয়জন জান্তা সেনা নিহত হয়েছেন। প্যালেতে পুলিশ সদস্যদের বহনকারী একটি গাড়িতে পিডিএফের হামলায় নিহত হয়েছেন ১২ জন জান্তা পুলিশ। এদিকে স্যাগাইনেই একটি পুলিশ স্টেশনে সিভিলিয়ান ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন অব মিয়াং (সিডিএসওএম) সদস্যদের হামলায় ১৫ জন জান্তা সেনা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পৃথক ঘটনায় জান্তা বাহিনীর দুটি সামরিক যানে হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে সিডিএসওএম।

এদিকে মাগে অঞ্চলে ইয়াও ডিফেন্স ফোর্সের (ওয়াইডিএফ) সঙ্গে ১১ ঘণ্টার লড়াইয়ে ২০ জন জান্তা সেনা নিহত হয়েছেন।
রেডিও ফ্রি এশিয়া জানায়, পিডিএফের এক মুখপাত্র বলেছেন, স্যাগাইনে নিহত জান্তা সেনাদের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডারও রয়েছেন। সোমবার সকালে একটি সেনাবহর প্যালে শহরের বাইরে হামলা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পিডিএফের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা রোববার থেকে ওই সেনাবহরের অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা জানতে পেরেছিলাম, সেনাবহরে একজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার থাকবেন।

মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় অং সান সু চিসহ তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের। এরপর থেকে দেশটিতে তুমুল বিক্ষোভ চলছে।

দেশটির স্যাগাইন অঞ্চলে এক অভিযানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৬৭ জন নিহত হয়েছেন।

সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ১৬৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)। এ ছাড়া দেশটিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাংবাদিক, শিল্পীসহ ৭ হাজার ২১৯ জনের বেশি মানুষ। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গত মাসে সংঘর্ষের ঘটনা ১৩২টিতে পৌঁছেছে।

সূত্রের বরাতে রেডিও ফ্রি এশিয়া জানায়, সশস্ত্র বিরোধীদের হাতে জান্তার হতাহতের ঘটনা বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন ১২০টির বেশি টেলিকম টাওয়ার ধ্বংস করে দিয়েছে পিডিএফ।

এদিকে মিয়ানমারের সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট বলেছেন, সেনাবাহিনী তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিল। তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলে আসছে, তারা কোনো অভ্যুত্থান ঘটায়নি। আইনগতভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরা জানায়, আদালতে উইন মিন্টের সাক্ষ্য সেনাবাহিনীর ওই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এটাই তাঁর ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর প্রথম জনসমক্ষে আসা কোনো বক্তব্য।
উইন মিন্টের আইনজীবীর ভাষ্য, সাবেক এই প্রেসিডেন্ট সাক্ষ্য দিয়েছেন যে জেনারেলরা ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের কয়েক ঘণ্টা আগে তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিলেন।

মঙ্গলবার উইন মিন্ট তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী।

রাজধানী নেপিডোর একটি বিশেষ আদালতে তাঁর বিচার চলছে। নেপিডোর সাবেক মেয়র মায়ো অং ওই বিচারের তৃতীয় আসামি। সু চি এবং সাবেক মেয়র অংয়ের পরে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সু চির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তারা উইন মিন্ট ও সু চিকে আটক করে।

সূত্র ; প্রথম আলো

Related Articles

Back to top button