নির্বাচনের খবর

দুই ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ

নিউজ ডেস্ক, সোনারগাঁ টাইমস২৪ ডটকম :

দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের দুই ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দলীয় প্রার্থীর লোকজন ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় শনিবার দুপুরে উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী লীগের ওই দুই বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন মিলন মিয়া ও মুরাদ সরদার। মিলন কালকিনি উপজেলার চরদৌলতখান (সিডিখান) ইউপি ও মুরাদ সাহেবরামপুর ইউপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাঁরা কালকিনি উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন হওয়ায় এক দিন আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ প্রার্থী। একই সঙ্গে প্রায় সব কটি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে কালকিনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন।

বেলা দুইটার দিকে চরদৌলতখান ও সাহেবরামপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিনিধি বাবুল প্যাদা ও দেলোয়ার প্যাদা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে প্রথমে তাঁরা কালকিনি পৌর ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়েন। পরে চরদৌলতখান ইউপির আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চান মিয়া শিকদার ও সাহেবরামপুর ইউপির আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. কামরুল আহ্সানের সমর্থকেরা বাবুল ও দেলোয়ারের হাতে থাকা মিলন মিয়া ও মুরাদ সরদারের মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেয়। এ সময় উপজেলা চত্বরে বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থক, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

চরদৌলতখান (সিডিখান) ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিলন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই বাবুল প্যাদা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে নৌকার প্রার্থী চান মিয়া ও তার লোকজন তাকে বাধা দেয়। চান মিয়া আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের লোকজন দিয়ে আমার মনোনয়নপত্র জোর করে ছিনিয়ে নেয়। আমি এ ঘটনা মৌখিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেব।

এ বিষয়ে সাহেবরামপুর ইউপির আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থী মুরাদ সরদার প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার মনোনয়নপত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন ছিনিয়ে নিয়ে তা টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলে। আমি সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানালেও তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাঁরা উল্টো জানান, আজ যদি মনোনয়নপত্র জমা না দিতে পারি, তাহলে কাল (রোববার) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হবে না। আমরা মনে হয় না কাল (রোববার) মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারব।

বিদ্রোহী দুই প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন, এমনটা শুনেছি। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবর তাঁদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে চরদৌলতখান ইউপির আওয়ামী লীগের প্রার্থী চান মিয়া শিকদার বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আমাদের নামে যা খুশি তা-ই বলে যাচ্ছে। তার অভিযোগ সত্য নয়, মনগড়া। আমাদের কোনো লোকজন তাদের মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেয়নি। তারা কী কারণে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারল না, সেটা তারাই জানে।

সাহেবরামপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. কামরুল আহ্সান বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী মুরাদ তার নিশ্চিত হার জেনে এখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ও না দেওয়া নিয়ে নাটক শুরু করেছে। আমার এলাকার জনগণ নৌকার বাইরে ভোট দেয় না। তাই মুরাদ আগে নির্বাচন থেকে সরে পড়েছে।

জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্রোহী দুই প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বাধা মুখে পড়েছেন, এমনটা শুনেছি। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবর তাঁদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় ১৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ডাসারে ৫টি ও কালকিনিতে ৮টি ইউপিতে দ্বিতীয় ধাপে ভোট হতে যাচ্ছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণ ১১ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৬ অক্টোবর।

দলীয় সূত্র জানায়, কালকিনি ও ডাসারের ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় ও ৭টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। দলের বিরুদ্ধে গিয়ে যাঁরা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, তাঁরা এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। তবে তাঁদের কাউকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলীয় চেয়ারম্যান ৬ জনের মধ্যে চারজনকে এবারও নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

Related Articles

Back to top button