জাতীয়

রাজাকারপুত্র-জামায়াত-বিএনপির হাতে নৌকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁ টাইমস২৪ ডটকম :

দ্বিতীয় ধাপে সারাদেশের ৮৪৮ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোটগ্রহণ ১১ নভেম্বর। তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর ১০০৭টির ভোট। এ উপলক্ষে সামগ্রিক প্রস্তুতি চলছে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী দিচ্ছে। এরই মধ্যে টানা ছয়দিনে মনোনয়ন বোর্ড ৮৪৮ ইউপির মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। ১৬ অক্টোবর থেকে দ্বিতীয় ধাপের মনোনয়ন ফরম বিতরণ করছে দলটি।

তবে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ও নৌকা এখন অনেক জায়গায় রাজাকারপুত্র-জামায়াত-বিএনপির পদধারী নেতা ও ওয়ারেন্টভুক্ত খুন-ধর্ষণ-প্রতারণা মামলার আসামিদের হাতে। টাকার বিনিময়ে যোগসাজশে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা এ কাজ করছেন বলে তৃণমূল থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়।

বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে চরম ক্ষোভ রয়েছে। অবশ্য একটা পক্ষও তৈরি হয়েছে যারা নিজের সুবিধার্থে সুসময়ের কোকিলদের সমর্থন দিচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রকৃত আওয়ামী লীগ কর্মীরা দ্বারস্থ হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতির। তাদের বিশ্বাস, তিনিই এর সমাধান করতে পারবেন। এরই মধ্যে তার দপ্তরে বহু আবেদন জমা পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক জায়গায় মনোনয়নও পরিবর্তন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন, কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দিলেও পরিবর্তন করে যোগ্যদের দেওয়া হবে।

এ নিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি নমিনেশন পেয়েছে, এমন সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া মাত্রই খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনবোধে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমি এ বিষয়ে অলরেডি বলেছি, বিতর্কিত কোনো নাম এলে সঙ্গে সঙ্গে খতিয়ে দেখতে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সবাইকে গঠনতন্ত্রের বিধান অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানা যায়, গত বৃহম্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন মনোনয়ন বোর্ড বসেছে। ধীরে ধীরে যাচাই-বাছাই করে কিছু প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত সবক’টিতে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে পেরেছে দলটি। তার মধ্যে কয়েকজনের মনোনয়ন পরিবর্তনও করেছে তারা।

ইউপির এ মনোনয়নের দৌড়ে অভিযুক্তরাও আছেন এমন তথ্য দিয়ে আগেই নিউজ করেছে সংবাদমাধ্যম। এর মধ্যে অনেক অভিযুক্তকে বাদ দিলেও মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যেও অনেকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রাজাকারের সন্তান, জামায়াত-শিবিরের নেতা, বিএনপির নেতা, অসামাজিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রবাসে অবস্থানকারী বিএনপি সমর্থকও আছে।

জানা যায়, নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউপিতে রাজাকার কোবাদ হোসেনের ছেলে এসএম আনিসুল ইসলামকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ আছে, এখানে প্রথমে ইমারুল গাজীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে অদৃশ্য কারণে সেটা পাল্টে রাজাকারপুত্রকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন ইমাদকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিরূপ মন্তব্য আসছে।

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল হক নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। তার বাবা সিরাজুল হক উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। আশরাফুল হকের মনোনয়ন বাতিলের জন্য এরই মধ্যে সম্মিলতিভাবে দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর আবেদন জানিয়েছেন অন্য প্রার্থীরা।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মনিরুল আলম সেন্টুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের। অথচ সেন্টু ফতুল্লা থানা বিএনপিরও সহ-সভাপতি ছিলেন।

প্রবাসে থেকেও শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শাহ আলম। বিএনপি পরিবারের এ সদস্যকে গেলো ইউপি নির্বাচনে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নৌকার মনোনয় দেওয়া হয়েছে। পরে পরাজিত শাহ আলম ফের বিদেশ চলে যান। এখনো তিনি দেশে নেই। অথচ তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। এ নিয়ে এলাকায় বেশ ক্ষোভ বিরাজ করছে। বুধবার (১৩ অক্টোবর) তিনি দেশে আসবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবলীগ নেতা সুমন আহমেদ ঢালি বলেন, ২০১১ সালের নির্বাচনে শাহ আলম বিএনপির সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৬ সালে তাকে অর্থের বিনিময়ে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়। পরে পরাজিত হয়ে বিদেশ চলে যান। এখন পর্যন্ত তিনি বিদেশে (ইতালি) আছেন। শুনেছি তিনিও মনোনয়ন পেয়েছেন। আমরা এ বিষয়টি সিনিয়র নেতাদের জানিয়েছি।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধুরাইল ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান ওয়ারিছ উদ্দিনকে (সুমন) ফের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অথচ দুই বছর আগে চেয়ারম্যান সুমন পরিষদের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে ‘অসামাজিক কার্যকলাপে’ মিলিত হন। যার ভিডিও ভাইরালও হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, নৈতিকভাবে তো তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা। সে জায়গায় উল্টো তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, দুই বছরে কোনো ব্যবস্থা না নিলেও এ নিয়ে চেয়ারম্যান সুমন জানান, এটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। মনোনয়নের জন্য ব্যস্ত থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বহেড়াতৈল ইউপিতে বিএনপির আব্দুল ওয়াদুদকে মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য, তাকে এবছর একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও করা হয়েছে।

তৃণমূলের বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যেসব জেলা ও উপজেলার নেতারা বিতর্কিত প্রার্থীদের পরিচয় গোপন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে লিস্ট পাঠিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related Articles

Back to top button