শহর

বাজারে লাগামহীন দামে চাপা ক্ষোভ বাড়লেও অসহায় মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সোনারগাঁ টাইমস২৪ ডটকম :

দ্রব্যমূল্য বাড়তে বাড়তে হটাৎ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের বাজার। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই আকাশচুম্বী দাম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের। একেতো করোনার ধাক্কা সামাল দিয়ে উঠার লড়াই তার উপর এ পরিস্থিতিতে পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিন্ম মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের মানুষগুলোর।

ক্রেতারা জানান, এভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকলে শেষে না খেয়ে পরিবার নিয়ে দিনরাত পার করতে হবে তাদের। অন্যদিকে বিক্রেতাদের দাবী, তারাই বেশি দামে সবকিছু কিনে আনছেন ক্রেতাদের কমে দেয়ার মত সুযোগ তাদের নেই। রোববার (১১ অক্টোবর) শহরের দ্বিগুবাবুর বাজার, মাসদারি বাজার, নিতাইগঞ্জ বাজার, কালীরবাজার এলাকা ঘুরে এ চিত্র উঠে এসেছে।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ শ্রমিক জেলার বাইরের। এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী ইপিজেড, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, সোনারগাঁওয়ে স্থানীয় ও অন্য জেলার সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ লাখ লোক এখানে নিম্ন ও নিম্ন মধ্য আয়ের মানুষ বসবাস করেন। এদের প্রায় অধিকাংশ থাকেন ভাড়া। আর তাই পরিবার পরিজন নিয়ে কাজ করে সেই আয় দিয়ে এখন তাদের জীবন পরিচালনা করা দূরহ হয়ে পড়ছে। সামনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও ইউনয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ বাজারমূল্য প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যেহেতু নৌকার প্রার্থী ছাড়া বিএনপি বা সমমানের কোন দলের প্রার্থী নেই সেহেতু নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতা পূর্ণ হবেনা এবং বেশীরভাগ স্থানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হলে প্রার্থীরা। আর সেক্ষেত্রে ভোটারদের গুরুত্বও থাকছেনা আগের মত।

শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকার চালের আড়ৎ গুলোতে ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতি কেজি পাইজাম চাল (মোটা চাল) বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা দরে। এছাড়া চিকন চাল (মিনিকেট) ও নাজিরশাল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ ও ৬৫ টাকা কেজি দরে। বাড়তি মুসরের ডালের দামও। বাজারে বর্তমানে প্রতিকেজি মুসুরির ডাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা দরে যা এক সপ্তাহ আগেও ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বাজারে চাল কিনতে এসে আসিফ জানান, যে হারে দ্রব্যের দাম বাড়ছে তা যদি অব্যাহত থাকে সামান্য ডাল ভাত খেয়ে দিন পার করতেও আমাদের আমাদের হিমশিম খেতে হবে। করোনায় অনেক ঋণ করে পরিবারকে অন্নের জোগান দিয়েছি এখনো সেই ঋণের ঘানি টানছি।

তার পর এ দুর্দশা, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে কারো তেমন উদ্যোগ নিতেও দেখছিনা। ঠেলাগাড়ি চালক আলম জানান, সবকিছুর দাম বাড়ছে কিন্তু আমাদের রোজগার বাড়ছে না। ফলে পরিবারের খাবার যোগান দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করবেনা কিন্তু করোনার সময় থেকে এখন পর্যন্ত এমনো দিন যায় পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকি। করোনার শুরু থেকে তিন বেলা পেট ভরে খেয়েছি এমন মনে পড়েনা আমার।

প্রায় সব বাজারেই টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজও দরে এবং প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এদিকে দ্বিগুবাবুর বাজার ঘুরে দেখা যায় বাজারে প্রতি কেজি শিম ১০০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, ঢেরসের কেজি ৬০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ফুলকপি ৬০ পিস, করলা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি, প্রতি কেজি জিঙ্গা ৫০ টাকা, পটল ৪৮ টাকা, বাধা কপি ৪০ টাকা পিস দরে। এদিকে বাজারে বর্তমানে দেশি পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পেয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানান বিক্রেতারা। আলু ও পেঁয়াজ বিক্রেতা রহিম মোল্লা জানান, দেশে পেঁয়াজের বড় একটা অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, যা মূলত ভারত নির্ভর। তবে এবছর এখনও ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না ফলে সেই আশঙ্কা থেকে আড়ৎদাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অস্থির ভোজ্যতেলের বাজারও। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের জন্য ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা।

কালীরবাজার এলাকার মুদি দোকানদার আসলাম জানান, আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে তাই আমরা বাড়তি দামে সদাই বিক্রি করছি। অন্যদিকে ক্রেতা আবুল হোসেন জানান, মাসের ব্যবধানে তেলের দাম প্রতি লিটারে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই দামে তেল কিনে খাওয়ার সাধ্য অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারেরও নেই। মাংসের বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায় এবং কক বা সোনালী মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা কেজি দরে। মুরগী বিক্রেতা মিলন হোসেন জানান, পূজার কারনে মুরগীর বাজার দর বর্তমানে চড়া। তবে পূজার পর দাম পড়বে।

এদিকে বাজারে প্রতি কেজি গরু মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে। বাজারে লেয়ার মুরগীর ডিম হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা কেজি দরে এবং হাসের ডিম ৫৫ হালি প্রতি ৫৫ টাকা। দ্রব্যমূল্যেত্র এই ভয়াবহ ঊর্ধ্বগতিতে এখন নিম ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে চলছে ‘নীরব কান্না’। জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, কেউ যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে এবং মজুদদারি ঠেকাতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। এ ছাড়া সরকারি নির্ধারিত মূল্যের বাইরে যেন বাজারে বেচাবিক্রি না হয় সেজন্য নজরদারি করতে আমরা আমাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসিল্যান্ডসহ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ বাজার মনিটরিং করছি। বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়তি আর তাই আমরা এ ব্যাপারে কঠোর হচ্ছি।

Related Articles

Back to top button